সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছে

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম ১২ অক্টোবর ঢাকার পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে বলেছিলেন, দুর্গাপূজার পর ছিনতাই, মাদক, চাঁদাবাজি ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা হবে। কোনো অপকর্ম ঘটিয়ে কেউ পার পাবে না।

এরপর দুই সপ্তাহ পার হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, সাঁড়াশি অভিযানেরও কোনো আলামত নেই। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে ঢাকা শহরের কোনো কোনো এলাকা অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার কথা উল্লেখ করা যায়।

পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে শনিবার মোহাম্মদপুর থানার সামনে শতাধিক মানুষ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন স্বাভাবিক হলো না, সেই প্রশ্নের জবাব পুলিশকে দিতে হবে। তাঁরা তিন দিন সময়ও বেঁধে দিয়েছেন।

বেসরকারি একটি টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে দেখা যায়, শুক্রবার রাতে মোহাম্মদপুরের বছিলার গার্ডেন সিটি এলাকায় একটি সুপারশপে মুখোশ পরা ডাকাতেরা চাপাতি দেখিয়ে কর্মচারীদের জিম্মি করে টাকা লুট করে নিচ্ছে। এর আগে ২০ অক্টোবর মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেড এলাকায় দুটি মোটরসাইকেলে ছয়জন ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে নেস্‌লে কোম্পানির গাড়ি আটকে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ১১ অক্টোবর বেড়িবাঁধ এলাকায় ব্যবসায়ী আবু বকরের বাসায় ও কার্যালয়ে ডাকাতি হয়। সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের পোশাক পরা ডাকাতেরা নিজেদের যৌথ বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেয়। ডাকাতির ঘটনায় র‍্যাবের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও জড়িত বলে জানা গেছে।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসানও স্বীকার করেছেন, মোহাম্মদপুর রাজধানীর অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি। জনবল–সংকটের কারণে পুলিশ সেখানে ঠিকমতো টহল দিতে পারছে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হিসাব অনুযায়ী, ১ থেকে ২৫ অক্টোবর অর্থাৎ গত ২৫ দিনে মোহাম্মদপুর থানায় চারটি হত্যাকাণ্ড, একটি ছিনতাই ও দুটি ডাকাতির মামলা হয়েছে। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে এই থানায় ১৭ খুন ও ১টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের একাংশ সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব এসব অস্ত্র উদ্ধার করে প্রত্যেক সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু এখনো বহু অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দখলবাজি, চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়, সাবেক সরকারের আমলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় অনেক স্থানে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। সরকার দায়িত্ব নিয়েছে আড়াই মাস হলো। এরপরও থানা–পুলিশ সক্রিয় হয়নি, এই অজুহাত মানুষ শুনতে চাইবে না।

কেবল মোহাম্মদপুর এলাকা নয়, ঢাকাসহ দেশের আরও অনেক এলাকায়ই আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। কোনো কোনো এলাকায় মব জাস্টিসের ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরাও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে আছেন। সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও।

এরপরও খুন, ছিনতাই, ডাকাতির মতো গুরুতর অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, তারা কি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না? গতকাল রোববার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা আশা করি, অভিযান আরও জোরদার করা হবে।