রক্ষক হয়ে কেন ভক্ষকের ভূমিকায়

জেলা-উপজেলার প্রশাসনই স্থানীয় নদ-নদীগুলোর অভিভাবক। তাদের অগ্রণী ভূমিকা ছাড়া নদ-নদীর সুরক্ষা সম্ভব নয়। দখলদার ও বালু ব্যবসায়ীদের হাতে নদ-নদীকে ছেড়ে দিয়ে নির্বিকার প্রশাসন—এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। অনেক সময় প্রশাসন নিজেই ক্ষতি করছে নদ-নদীর। এমনটাই দেখা যাচ্ছে যশোরের মনিরামপুরে। সেখানে হরি নদের ওপর আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করছে উপজেলা প্রশাসন। প্রশ্ন উঠতে পারে, নদের জায়গাকে বেছে নিয়ে বরং সরকারি প্রকল্পটিকেই বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস নয় এটি? 

অপরিকল্পিত সেতু ও কালভার্ট বানিয়ে যশোরের নদ-নদীগুলো কতটা নাজুক অবস্থায় আছে, তা প্রথম আলোর একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মনিরামপুরের হরিহর ও মুক্তেশ্বরী নদীকেও এর শিকার হতে হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সেখানে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাদের কারণেই আরেকটি নদ হরি ক্ষতির মুখে পড়েছে। উপজেলার কপালিয়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে ১৪টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে, যেগুলোর সব কটিই পড়েছে নদের জায়গায়। 

নদের জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ না করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠিও দিয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, নদের সীমানা বাদ দিয়েই ঘর নির্মাণ করা হবে। কিন্তু সেই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, কয়েক বছর আগেও এই জায়গায় হরি নদ বেশ বড় ছিল। নদ বুজে এখন সেটি খালের মতো হয়ে গেছে। এরপর প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসনের এমন ভূমিকার কারণে সেই খালের অস্তিত্বও এখন থাকবে কি না। কারণ, হরি নদের তীরে আগেও বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প করা হয়েছে।

পাউবোই আবার প্রশাসনকে হরি নদের ওপর এমন কর্মকাণ্ড করতে একধরনের সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ, ওই অঞ্চলে নদ-নদীগুলোয় যে খননকাজ চালানো হয়েছিল, তার বেশির ভাগ মাটিই ফেলা হয়েছিল নদ-নদীর তীরে। ওই মাটি নদ-নদীতে পড়ে এগুলো আরও ভরাট হয়েছে। কপালিয়ায় এমন ভরাট হয়ে যাওয়া নদের জায়গাতেই চলছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ। এ প্রকল্প করতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসন আরও একটি আইনবিরুদ্ধ কাজ করছে, অবৈধভাবে বালু তুলে। এর জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে যে অনুমতি নিতে হয়, তার ধার ধারেনি তারা। 

আশ্রয়ণ প্রকল্প সরকারের একটি প্রশংসিত প্রকল্প। স্থানীয় প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে প্রকল্পটি নানা সময়ে সমালোচিত হয়েছে। যশোরের জেলা-উপজেলা প্রশাসন এ প্রকল্পের জন্য কেন বারবার নদীর জায়গা ও তীর বেছে নিচ্ছে? পরিবেশবিধ্বংসী কাজে স্বয়ং প্রশাসনের এমন ‘উৎসাহী’ হয়ে ওঠা গভীর উদ্বেগের। আমরা সেই উদ্বেগই প্রকাশ করলাম। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে বরং বিকল্প জায়গা খোঁজা হোক।