সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

উন্নয়নের নামে নির্বিচার গাছ কাটা নয়

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক প্রশস্ত করার প্রয়োজন কেউ অস্বীকার করবে না। কিন্তু সেই সড়কের উন্নয়ন বা প্রশস্ত করার নামে নির্বিচার গাছ কাটাকে মেনে নেওয়া যায় না।

প্রথম আলোর লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর-রামগতি-চর আলেকজান্ডার আঞ্চলিক সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়কের প্রায় ১৫ হাজার গাছে লাল চিহ্ন দিয়ে আগাম মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য হলো সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অধীনে রোপণ করা গাছগুলো এভাবে কাটা হলে এলাকার পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

সম্প্রসারণ ও উন্নয়নকাজের জন্য সবচেয়ে বেশি—১৩ হাজার ৪৪৫টি গাছ কাটা পড়বে ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ লক্ষ্মীপুর-রামগতি-চর আলেকজান্ডার আঞ্চলিক সড়কে। সড়কটির দুই পাশেই সারি সারি কড়ই, মেহগনি ও শিরীষগাছ রয়েছে। গত বছর এসব সড়কের গাছ কাটার জন্য বন বিভাগকে চিঠি দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুপারিশে জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটি গাছগুলো কাটার অনুমোদনও দিয়েছে। মোট ১৫ হাজার ২৪২টি গাছ কাটার জন্য নাম্বারিং শেষ হয়েছে।

সামাজিক বনায়নের একটি কমিটির সদস্য ভবানীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, গাছ লাগানোর পর তাঁরা দেখেশুনে রেখেছেন। এ জন্য তাঁদের সঙ্গে লিখিত চুক্তিও আছে। গাছ বিক্রি হলে তাঁরা কিছু টাকা পাবেন। তবু গাছ কাটার উদ্যোগকে সমর্থন করেন না। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা অনুযায়ী, গাছ বিক্রির টাকা উপকারভোগী ৫৫ ভাগ, বন অধিদপ্তর ১০ ভাগ, ভূমির মালিক হিসেবে সওজ ২০ ভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ৫ ভাগ পেয়ে থাকে।

সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বলেন, লক্ষ্মীপুর-রামগতি-চর আলেকজান্ডার আঞ্চলিক সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুটে উন্নীত করা হবে। কিন্তু বর্তমানে সড়কের যে অবস্থা, তাতে গাছ না কেটেও প্রশস্ত করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মূল সড়কের দুই পাশে যে খালি জায়গা আছে, তাতে অনায়াসে ৬ ফুট প্রশস্ত করা সম্ভব। যদি কোথাও গাছ কাটার প্রয়োজন হয়, এক পাশের গাছ বাঁচিয়ে রাখা যায়।

লক্ষ্মীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি জেড এম ফারুকী বলেন, প্রশাসন স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবু হাজার হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ বন্ধ করা দরকার।

আমরাও মনে করি, সওজ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করুক। গাছ না কেটে সড়ক প্রশস্ত করা হবে উত্তম। আর যদি একেবারেই গাছ কাটতে হয়, যথাসম্ভব কম গাছ কাটতে হবে। এ বিষয়ে সওজের উচিত স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া। তারা সড়কের একক মালিক হলেও গাছের মালিক নয়। যাঁরা ২০ বছর ধরে গাছগুলোকে যত্নে লালন করেছেন, তাঁদের মতামত উপেক্ষা করা যাবে না।