সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

হাওরে শিল্পবর্জ্য

কৃষকদের কি চাষাবাদ ছেড়ে দিতে হবে

সিলেট অঞ্চলে হাওরের পানি শুকিয়ে গেল বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষাবাদ হয়। কিন্তু সেখানকার হাওরগুলোতে দিন দিন দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এ যদি হয় পরিস্থিতি, কৃষক কী করে বাঁচবে! তেমন দশাই দেখা যাচ্ছে হবিগঞ্জের মাধবপুর ও লাখাই উপজেলায়। সেখানকার সাতটি হাওর ও খাল-বিল দূষিত হয়ে গেছে শিল্পবর্জ্যে। এ কারণে দুই উপজেলার কৃষিব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে।

বর্ষাকালসহ বছরের কয়েক মাস হাওর মানেই পানিতে টইটম্বুর। আর বাকি সময় সেসব ফসলের মাঠ। তখন হাওরের মাঝখানে প্রবহমান থাকে ছোট ছোট খাল। সেসব খালই মূলত হাওর এলাকার কৃষিব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখে। মাধবপুর উপজেলার শিবজয়নগর হাওরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত তেমন একটি খাল হচ্ছে রাজ খাল। পাঁচটি হাওরের পাশ দিয়ে এ খাল প্রবাহিত।

১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার খালটি ঘিরেই ওই এলাকার কৃষিব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। কিন্তু সম্প্রতি এ খালের পানি চাষিরা সেচকাজে ব্যবহার করতে পারছেন না। কারণ, খালটি শিল্পবর্জ্যে দূষিত হয়ে গেছে।

আট বছর আগে মাধবপুরের শিবজয়নগর ও হরিতলায় পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেড ও নাহিদ ফাইন টেক্স নামের দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এ দুই প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানার বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলছে—এমনটাই অভিযোগ। এতে মাধবপুরের পাঁচটি ও লাখাই উপজেলার দুটি হাওরের কৃষিজমিতে ফসল চাষ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে চলতি বোরো মৌসুমে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। সেচকাজে এ পানি ব্যবহার করতে পারছেন না তাঁরা। শুধু তা–ই নয়, আশপাশের আরও খাল-বিল ও নদেও এ দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে।

হাওর, খাল-বিল-নদ দূষিত হওয়ায় শুধু ফসলেরই ক্ষতি হচ্ছে না, কোনো জলাশয়ে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্গন্ধের জন্য বাড়িঘরে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগে ভুগছেন অনেকে। সব ধরনের জীবন-জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। যদিও নিজস্ব বর্জ্য শোধনাগার আছে বলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দায় চাপিয়ে দিচ্ছে অন্যদের ওপর। এখন প্রতিষ্ঠানগুলো যদি বিষয়টি অস্বীকার করে, তাহলে এ শিল্পবর্জ্য আসছে কোথা থেকে?

কৃষিজমি নষ্ট হলে উৎপাদন কমে যাবে, ওই এলাকার ফসল উৎপাদনের সরকারি লক্ষ্যমাত্রাও কমে যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কি এখানে কিছু করার নেই? পরিবেশ অধিদপ্তর কী করছে সেখানে?

স্থানীয় প্রশাসনও কি নির্বিকার থাকবে? সিদ্ধান্ত এখন তাদের, তারা ওই এলাকায় কৃষিব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে চায়, নাকি তা ধ্বংস হওয়াটাই চেয়ে চেয়ে দেখবে।