দেশে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলেই আগুন নেভানোর পানি নিয়ে হাহাহার পরিস্থিতি তৈরি হয়। জলাশয় কমে আসায় ঘটনাস্থলে গিয়ে পানির অভাবে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকেও। এতে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেড়ে যায়। এর থেকে রেহাই পাওয়ার বড় একটি উপায় হতে পারত নগর এলাকায় ফায়ার হাইড্রেন্ট (আগুন নেভানোর কাজে বিশেষ পানিকল) বসানো। দেশে বড় শহরগুলোর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামেই এ পানিকল দেখা যায়। কিন্তু এতে আশাবাদী হতে গিয়েও হওয়া যাচ্ছে না। কারণ, পানিকলগুলো শহরটিতে কোনো কাজেই আসছে না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চট্টগ্রাম নগরে আগুন নেভাতে পানির উৎস হিসেবে ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করে ওয়াসা। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পে খরচ হয় ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। কিন্তু আগুন নেভাতে এসব পানিকলের একটিও ব্যবহার করছে না ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সমস্যায় সরকারি সংস্থাগুলোর যে সমন্বয়হীনতা ও পরস্পরকে দোষারোপের কথা বারবার উঠে আসে, এখানেও তেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, পানিকলগুলো বসানোর প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি। সেসব পানিকলে পানির চাপ থাকে না; ফলে সেখান থেকে খুব বেশি পানি ওঠে না। এ ছাড়া পানিকলগুলোতে পাইপ লাগানোর ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। হাইড্রেন্ট বসানোর আগে ওয়াসার পক্ষ থেকে কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া হয়নি বলে এমনটি ঘটেছে।
তবে ওয়াসা বলছে, সংস্থাটি শুরুতে নগরে ৩০টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বসায়। ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে ও কয়েক দফা আলোচনা করে পানিকলগুলো বসানো হয়। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর সংস্থার কর্মকর্তারা কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় পরে আরও ১৪৪টি পানিকল স্থাপন করা হয়েছে।
দুই সংস্থা থেকে আমরা অনেকটা বিপরীত বক্তব্য পাচ্ছি। পানিকলগুলোতে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে পানিকলগুলোর সঙ্গে পাইপ সংযুক্ত করতে যে অ্যাডাপ্টর লাগবে, তা নেই। জানা যাচ্ছে, প্রকল্প শেষ হওয়ায় এই অ্যাডাপ্টর লাগাতে আর আগ্রহী নয় ওয়াসা। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের প্রশ্ন, তারা কোন যুক্তিতে এই যন্ত্রাংশ কিনবে, এর পেছনে ব্যয়ও কীভাবে করবে তারা?
কথা হচ্ছে, ওয়াসা যদি ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে ও আলোচনা করে এ প্রকল্প করে, তাহলে এই সংকট কেন তৈরি হলো? এত কোটি টাকা খরচ করেও পানিকলগুলো দুই বছর ধরে পড়ে আছে। নগরীতে পানিকলগুলো কি বসানো হয়েছে শোভাবৃদ্ধির জন্য? শুধু প্রকল্প শেষ করেই দায় সারার এ সংস্কৃতির অবসান কবে হবে? দ্রুত পানিকলগুলো ব্যবহারের উপযোগী করা হোক। অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় এসব পানিকল ব্যবহারের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম দেশের অন্য শহরগুলোকে পথ দেখাক।