কুতুবদিয়ায় সিটি পার্ক

খাল ভরাট করে, এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক

দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বড় অভিঘাত হিসেবে দেখা যায় কুতুবদিয়াকে। কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ উপজেলাটির আয়তন একসময় দুই শতাধিক বর্গকিলোমিটার হলেও তা এখন প্রায় ৪৫ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাসে ভিটেমাটি ও ঘরবাড়ি হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ দ্বীপটি ছেড়ে গেছেন। কুতুবদিয়ায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ভেতরে এখন বসবাস করছেন দেড় লক্ষাধিক মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে পুরোনো একটি খাল ভরাট করে সিটি পার্ক গড়ে তুলছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক চেয়ারম্যান। এমন কর্মকাণ্ড দ্বীপটিকে আরও বড় ঝুঁকিতে ফেলে দেবে।      

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার প্রধান সড়কের পাশে পানি চলাচলের পুরোনো একটি খাল ভরাট করে সিটি পার্ক গড়ে তুলছেন উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার। সেখানে নির্মাণ করা হবে বাস টার্মিনাল, যাত্রীছাউনি, দোকানপাট, শৌচাগার ও ফুলের বাগান। এসব তৈরির প্রস্তুতি হিসেবে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে খাল ভরাট করা হচ্ছে। খাল ভরাটের কারণে ইতিমধ্যে স্লুইসগেট বন্ধ হয়ে পানি চলাচলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাতে ধান ও লবণ চাষ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার সরকারি খাল ভরাটের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, জনগণের দুর্ভোগ লাঘব এবং সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সিটি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব কাজে ইতিমধ্যে তিনি ১৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করে ফেলেছেন, আরও টাকা খরচ করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি খাল ভরাট করলে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হয়, নাকি আরও বাড়ে। 

ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, আগের ইউএনও দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা সড়কের যানজট নিরসনে খাল ভরাট করে বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য তাঁকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বর্তমান ইউএনও রাশেদুল ইসলামও সিটি পার্ক নির্মাণের বিষয়ে অবগত আছেন। বর্তমান ইউএনও বলছেন, কথা ছিল পরিত্যক্ত অথবা ভরাট খাল খনন করে সেই মাটি দিয়ে এই খাল ভরাট করতে হবে। ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে খাল ভরাট করা হচ্ছে কি না, তাঁর জানা নেই। তা ছাড়া খালের স্লুইসগেট বন্ধ করে পানি চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করারও কথা ছিল না। সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিকর কিছু হয়ে থাকলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

গত বুধবার বিকেলে স্থানীয় এলাকাবাসী সিটি পার্কটি নির্মাণের কাজে বাধা দেন। ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন এলাকাবাসীকে মামলার হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ রেখে চলে যান। আমরা আশা করব, পরিবেশ ও কৃষির ক্ষতি করে এখানে কোনো স্থাপনা করা হবে না। আর সেখানে বাস টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজন হলে সরকারিভাবে প্রকল্প গ্রহণ করা হোক। ইউপি চেয়ারম্যানকে দিয়ে কেন তা করতে হবে?