সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

প্রশাসনকে আরও কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধ কর্মকাণ্ড ও লুটতরাজের বড় একটি উৎস ছিল নদ-নদীর বালু লুট। সেটি করতে গিয়ে নদ-নদীগুলো এবং তৎসংলগ্ন জনপদের সর্বনাশ ডেকে আনা হয়েছে। দলীয় প্রভাব ও ক্ষমতাচর্চার কাছে স্থানীয় প্রশাসনও খুব একটা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কোথাও কোথাও তাদের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্নও তৈরি হয়। কিন্তু সরকার পতনের পর অনেক জায়গায় বালু লুটের উৎসব এখনো চলছে। পুরোনো বালুখেকোর জায়গায় যুক্ত হয়েছে নতুন বালুখেকো।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জের সদরগড় এলাকায় অন্তত ১০০ কোটি টাকার বালু লুট হয়েছে। সেখানে চলতি নদে বালু লুট বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন বাঁশের বেড়া দিয়েছিল, যাতে নদের ভেতর বাল্কহেড ও নৌকা না ঢুকতে পারে; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বালুখেকোরা বেড়া দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙে ফেলে। শুধু তা–ই নয়, পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে শত শত বাল্কহেড ও নৌকায় বালু নেওয়া হয়েছে।

বালু ব্যবসায়ী, শ্রমিক, পরিবেশ আন্দোলনকারীসহ স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময় কিছু কিছু উদ্যোগ নিলেও পুলিশ অনেকটা নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ছিল। পুলিশের দুর্বলতা আর যোগসাজশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বালুখেকোরা। এর সুযোগ নিচ্ছেন রাজনৈতিক দলের কর্মী, সাংবাদিকসহ অনেকে। এলাকাবাসী এই বালু লুটের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী করেছেন সদর থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের লোকজনকে। এর সঙ্গে নদীতীরের কিছু লোকের একটি সিন্ডিকেটের কথাও বলেছেন তাঁরা। যাঁরা পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে থাকেন। তবে দায়িত্বরত পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে বালুখেকো সিন্ডিকেট খুবই শক্তিশালী। অল্প কয়েকজন পুলিশ সদস্য দিয়ে শত শত নৌকা নিয়ে আসা বালু আটকানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার নেতারা বলছেন, চলতি নদ এখন মাফিয়া চক্রের কবলে। আগে এলাকার সাধারণ বারকি শ্রমিকেরা ছোট ছোট নৌকা দিয়ে বালু তুলে সংসার চালাতেন, এখন ড্রেজারের কারণে হাজার হাজার বারকি শ্রমিক বেকার। লুটেরাদের কারণে তাঁদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে।’

আমরা মনে করি, শুধু অভিযান চালিয়ে বালু লুট বন্ধ করা সম্ভব হবে না। অবৈধ বাল্কহেড জব্দ করে ধ্বংস করতে হবে। জব্দ করতে হবে বালু বহনকারী সব ধরনের যানবাহন। সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।