সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

আইন প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে

প্রাণপ্রকৃতিতে পাখি মানে শান্তির অপর নাম। গ্রামের মাঠে–ঘাটে, শস্যভিটায়, একা বা জোড়ায় হেঁটে হেঁটে ঘুঘু পাখির শস্যদানা খাওয়ার দৃশ্য যে কারও নজর কাড়ে। কিন্তু গ্রামগঞ্জের অতিপরিচিত এ পাখি এখন আগের মতো দেখা যায় না।

গ্রামগঞ্জের মানুষেরাই না বুঝে বা অতিলোভে পাখিটিকে মেরে ফেলছে। শরীয়তপুরের ডামুড্যায় একজন কৃষক সম্প্রতি ৪০-৫০টি ঘুঘু পাখি মেরে ফেলেছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ডামুড্যার সিড্যা ইউনিয়নের মধ্যসিড্যায় শাহজাহান মাতবর নামের ওই কৃষক ঘুঘু পাখি মেরে ফসলি জমিতে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। তিনি সিড্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। শাহজাহান মাতবর এবার ৩৫ শতাংশ জমিতে গমের আবাদ করেন। ওই জমিতে নানা প্রজাতির পাখি এসে গম খেয়ে ফেলছিল ও বিনষ্ট করছিল।

ফসল রক্ষার জন্য শাহজাহান জমিতে খাবারের সঙ্গে একধরনের বিষ প্রয়োগ করেন। বিষমিশ্রিত ওই খাবার খেয়ে ৪০-৫০টি পাখি মারা যায়। পরে শাহজাহান ৮-১০টি মরা ঘুঘু ফসলি জমিতে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন। বাকি মৃত পাখিগুলো মাটিচাপা দেওয়া হয়।

কৃষিনির্ভর উৎপাদনে পাখি ও কীটপতঙ্গের উপস্থিতি অপরিহার্য। ফসলের একধরনের নিরাপত্তাও দিয়ে থাকে তারা। ক্ষতিকর পোকামাকড়, ব্যাকটেরিয়া ও রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। ফলে সেই ফসলে তাদের হিস্যা থাকাও স্বাভাবিক। আর ফসল পাকলে খাদ্যের সন্ধানে পাখি তো আসবেই। এতে খেত ও কৃষকের ক্ষতি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ফসলের খেতে পাখির উপদ্রব নতুন কিছু নয়। আদিকাল থেকেই কৃষকদের কাছে এর নানা উপায় জানা আছে। তাই বলে একজন কৃষক হয়ে শাহজাহান মাতবর যে ঘৃণ্য কাজটি করেছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর দুই বছরের জেল, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না।

খবর পেয়ে ডামুড্যার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন দাশগুপ্ত ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমারত হোসেন ওই এলাকায় যান। এ সময় সুজন দাশগুপ্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাহজাহান মাতবরকে জরিমানা করেন। তবে কৃষক শাহজাহান মাতবর জমিতে বিষপ্রয়োগের কথা অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হোক। আইন প্রয়োগে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারলে পাখিদের রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।