সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ট্রাফিক সংকেত না মানা

কঠোরভাবে সড়ক আইনের প্রয়োগ দরকার

রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর এলাকায় গত এক মাসে (জুন) তিন লাখ গাড়ি ট্রাফিক সংকেত অমান্য করেছে বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম যে তথ্য দিয়েছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। মেয়রের ভাষ্যমতে, গুলশান ২ গোলচত্বরে পরীক্ষামূলকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) মাধ্যমে গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

ঢাকায় যানবাহন চলাচলে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা চলে আসছে বহু বছর ধরে। গুলশান ২ নম্বর এলাকায় এক মাসে তিন লাখ গাড়ি ট্রাফিক সংকেত না মেনে থাকলে পুরো ঢাকা শহরের পরিস্থিতি অনুমান করা কঠিন নয়। ঢাকা শহরে প্রতিদিন লাখ লাখ যানবাহন চলাচল করে; যার মধ্যে ভারী যানবাহন থেকে শুরু করে মাঝারি ও হালকা যানবাহনও রয়েছে।

আছে যান্ত্রিক–অযান্ত্রিক রিকশাও। গুলশান এলাকায় মূল সড়কে রিকশা চলাচল করে না। যেসব এলাকায় বড় সড়কে রিকশা চলাচল করে, সেসব এলাকায় ট্রাফিক সংকেত না মানা ও দুর্ঘটনার সংখ্যা যে আরও বেশি, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও দেড় কোটি জন-অধ্যুষিত ঢাকা শহরে একটি যুগোপযোগী ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে ঢাকার সড়কে ডিজিটাল সিগন্যাল বসানো হলেও সেটাও পুরোপুরি কাজে লাগেনি। এখনো পুলিশকে হাত তুলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এটাই যদি ডিজিটাল কিংবা স্মার্ট বাংলাদেশের নমুনা হয়, তা হলে আমাদের কিছু বলার নেই।

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের একটি ভয়ংকর সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ ট্রাফিক আইন না মানা। বাংলাদেশে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানবাহনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই বর্ধিত যানবাহন চলাচলের জন্য যে টেকসই ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার, সেটা আমরা করতে পারিনি।

নিরাপদ সড়ক আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ট্রাফিক সংকেত ভঙ্গের জরিমানা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার করা হয়েছে। এ ছাড়া হেলমেট না পরে মোটরসাইকেল চালালে জরিমানা ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সিটবেল্ট না বাঁধলে কিংবা যান চালনারত অবস্থায় মুঠোফোন ব্যবহার করলে চালককে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে।

সমস্যা হলো এই আইন করার সময়ই একশ্রেণির পরিবহনমালিক ও শ্রমিক বিরোধিতা করেছিলেন। তঁারা আইনের কার্যকারিতা অনেক দিন ঠেকিয়েও রেখেছেন। অভিযোগ আছে, অনেক সময় ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীরা আইন মানার ক্ষেত্রে উদাসীন। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় কিশোর শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে বিষয়টি দেখিয়ে দেওয়ার পরও পরিস্থিতি খুব বদলায়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে গুলশান ২-এ ট্রাফিক সংকেত না মানার যে তথ্য তুলে ধরেছে, তার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি ও জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।

শুধু গুলশান ২ নয়, পুরো ঢাকা শহরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সড়ক আইন অমান্যকারীদের শনাক্ত করে জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আইন যত কঠোরই হোক কেন, সেটি যদি প্রতিপালিত না হয়, আইন অমান্যকারীরা যদি শাস্তির বাইরে থেকে যায়, তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে কীভাবে?