ব্যবসায় কারসাজি

দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনুন

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভায় খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছে, তাতে একশ্রেণির ব্যবসায়ীর কারসাজির দিকটিই সামনে এসেছে। সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি না হওয়ার জন্য উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী—এই তিন পক্ষ একে অপরের প্রতি দোষারোপ করছে।

গত রোববার এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভায় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পরিশোধিত চিনি ও খোলা ভোজ্যতেল কেন বিক্রি করা হয়? জবাবে তাঁরা জানান, বেসরকারি মিলগুলো থেকে সরকার নির্ধারিত দামে পরিশোধিত চিনি ও খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যায় না। যে দামে কেনেন, তার সঠিক রসিদও মিলগুলো দেয় না। এ কারণে বাধ্য হয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম সমস্যার সমাধানে উৎপাদন (মিল), পাইকারি ও খুচরা—তিন পর্যায়েই দাম সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি জানান। তবে সভায় মিলগুলোর প্রতিনিধিরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। মিলমালিকদের দাবি, তাঁরা সব সময় বিক্রির রসিদ সরবরাহ করেন। এ নিয়ে মিলমালিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতণ্ডাও হয়। তঁারা একে অপরকে দোষারোপ করে দায় এড়াতে চাইছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে যদি ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দেন, তাহলে ভোক্তারা কোথায় যাবেন? রোজার সময় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে উৎসবের সময় পণ্য বিক্রিতে ছাড় দেওয়া হয়। আর আমাদের দেশে উল্টো মূল্য বৃদ্ধি পায়। অন্তত এ বছর রোজায় দাম বাড়ানো হবে না—এই অভ্যাসটা শুরু করি।’ কিন্তু অভ্যাসটা যাদের তৈরি করার কথা, তঁারা সব সময়ই তক্কে তক্কে থাকেন কীভাবে দাম বাড়ানো যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম কমলে এখানে কমানো হয় না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বেশি দাম নিলে ও পাকা ভাউচার ছাড়া পণ্য বিক্রি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। কথায় বলে, চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি। যাঁরা বাজার কারসাজি করেন, কোনো সদুপদেশ ও সতর্কবাণী তাঁদের কর্ণকুহরে পৌঁছাবে না। প্রতিবছর রোজার আগে এ রকম দফায় দফায় বৈঠক হয় এবং সেখানে ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামের বেশি কেউ নেবেন না বলে প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁরা তা অবলীলায় ভঙ্গ করেন। প্রশ্ন হলো, যাঁদের বাজার তদারক করার কথা, তাঁরা কী করছেন? তাঁরা কি মিল-কারখানাগুলো ও বড় বড় আড়ত পরিদর্শন করেন? করেন না। পণ্যের দাম নিয়ে খুব হইচই হলে বড়জোর তাঁরা দু-চারটি আড়ত ও দোকানে লোকদেখানো তল্লাশি চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন।

মুক্তবাজার ব্যবস্থাও হতে হবে প্রতিযোগিতামূলক। এখানে একচেটিয়ার সুযোগ নেই। ব্যবসায় কারসাজি, সেটি ছোট–বড় ব্যবসায়ী কিংবা মিলমালিক—যে–ই করুক না কেন, বন্ধ করতেই হবে। এ ক্ষেত্রে নিবিড় তদারকির যেমন বিকল্প নেই, তেমনি আইনের আওতায় আনতে হবে দায়ী ব্যক্তিদের।