গাড়ি চালাতে নতুন লাইসেন্স পাওয়া কিংবা আগের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেটি নবায়ন করতে চালকদের মাসের পর মাস ধরনা দিতে হয়।
পৃথিবীর কোথাও লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানোর রেওয়াজ না থাকলেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ সেটিকেই নিয়ম করে ফেলেছে। লাইসেন্স না থাকায় সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছেন বিদেশগামী কর্মীরা। স্মার্ট কার্ড ছাড়া তাঁরা বিদেশ যেতে পারছেন না। একজন বিদেশগামী চালক দালালের মাধ্যমে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করে দুই মাস ধরে অপেক্ষায় আছেন। ঢাকার পল্টনের একটি ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক ফুজায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নেওয়া অনেকেই লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কেউ কেউ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সোয়া ছয় লাখ মানুষের লাইসেন্স আটকা আছে বিআরটিএতে। সংস্থাটি লাইসেন্স না দিয়ে আবেদনপত্র গ্রহণের একটি কাগজ চালককে দেয়, যা দেখিয়ে তাঁরা সড়কে পুলিশের হয়রানি থেকে রেহাই পান। এরপরও অনেক সময় তাঁদের নাজেহাল হতে হয়। অভিযোগ আছে, বিগত সরকারের আমলে ওবায়দুল কাদের সড়ক ও সেতুমন্ত্রী থাকাকাল পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কার্ড সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড ব্যবস্থাই তুলে নিয়ে সাধারণ মানের প্লাস্টিকের পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিআরটিএ সূত্র জানায়, পিভিসি কার্ড দেওয়া হবে নতুন আবেদনকারীদের। পুরোনো আবেদনকারীদের আগের কার্ডই দেওয়া হবে। পিভিসি কার্ড চালুর মূল লক্ষ্য দ্রুত প্রিন্ট করা যায়। এতে মানুষের ভোগান্তি কমবে। তবে এই কার্ডেও কিউআর কোড থাকবে, যা দিয়ে পথে লাইসেন্সের সঠিকতা যাচাই করা যাবে। মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য এটি আপাতত ভালো সিদ্ধান্ত হলেও স্মার্ট কার্ডেই ফিরে যেতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী কোনো দেশ এখন পিভিসি ব্যবহার করে না।
এ বিষয়ে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ প্রিন্টার্সের অভিযোগ, বিআরটিএ বিল পরিশোধ করছে না বলে তারা কার্ড সরবরাহ করতে পারছে না। আবার বিআরটিএ বলছে, মাদ্রাজ প্রিন্টার্স কার্ড সরবরাহ করছে না বলে তারা চালকদের দিতে পারছে না। চুক্তি অনুযায়ী সেবাদান প্রতিষ্ঠানকে ২০২৬ সালের জুলাইয়ের মধ্যে ৪০ লাখ কার্ড সরবরাহ করার কথা থাকলেও তারা এ পর্যন্ত করেছে মাত্র ২০ লাখ।
বছরের পর বছর এই ভোগান্তি চললেও আগের সরকার সমাধানের উদ্যোগ কেন নেয়নি, তার তদন্ত হওয়া দরকার। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০২১ সালে একটি জরিপে জানিয়েছিল, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয় ৮৩ দশমিক ১ শতাংশ খানা (পরিবার)। ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার সেবা নিয়েছে দালাল বা অন্য কোনো মাধ্যমে।
নতুন সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বিআরটিএ ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন। এটা কেবল মুখে বললেই হবে না। চালকদের দ্রুত লাইসেন্স সরবরাহ করেই সেটা সম্ভব। আশা করি, পুরোনো অভ্যাস থেকে বেরিয়ে এসে বিআরটিএ চালকদের যত দ্রুত লাইসেন্স দিতে পারবে, ততই মঙ্গল।