সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পরিত্যক্ত ভবনে আদালত

দুর্ঘটনা হলে দায় নেবে কে

রাজধানী ঢাকায় ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শুধু ঢাকা শহরেই নয়, দেশের অন্যান্য শহরেও আছে। শুধু তাই নয়, এমন ভবনে চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি আদালতও। যেমন আমরা দেখছি খুলনার কয়রা উপজেলায়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সেখানে চলছে আদালতের কার্যক্রম। আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে ১০ বছর আগে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে এর দায় কে নেবে?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সহকারী জজ আদালত ভবনটি ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে গণপূর্ত বিভাগ। এখন বিকল্প জায়গা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বিচারিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। ভবনের দেয়াল ও ছাদে ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে অনেক আগে।

প্রতিবছর তা মেরামতের নামে ঢেকে দেওয়া হলেও বেশি দিন টেকে না। মাঝেমধ্যে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে দলিল ও কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিটি কক্ষের ছাদ ও দরজা-জানালা বেহাল। হাজতখানার দরজা-জানালা ভাঙা, শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী।

১৯৮৪ সালে আদালত ভবনটি নির্মাণ করা হয়। সেটিতে দুটি আদালতে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ মামলার হাজিরা ও শুনানির দিন ধার্য থাকে। ফলে সেখানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ লোকের সমাগম ঘটে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত হওয়ায় আদালতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ভীতি কাজ করে।

সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে আদালত ভবনের পুলিশ ব্যারাক ও হাজতখানা। সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৫ পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। হাজতখানায় আসামি রেখে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় তাঁদের। কিছুদিন আগে হাজতখানার জরাজীর্ণ জানালা ভেঙে এক আসামি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

আদালতে নিরাপত্তা জোরদারে প্রধান বিচারপতির ১১ দফা নির্দেশনা থাকলেও তা কয়রার জরাজীর্ণ আদালত ভবনে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বিষয়টি আদালত কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত বিভাগকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।

এখন খুলনা গণপূর্ত বিভাগের বক্তব্য, পরিত্যক্ত ঘোষণার পর তখন ভবনটি ভেঙে সেখানে নতুন একটি আদালত ভবন নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন পার হলেও ফিরতি কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি। এত বছরেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়াটা দুঃখজনক।

গণপূর্ত বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, ‘কয়রা আদালতের নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ আমরা তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই। পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেখানে একটা নতুন আদালত ভবন দেখতে পাব বলে আমরা আশা করছি।