সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিন

দেশীয় অর্থায়ন বা বিদেশি ঋণে সেতু নির্মাণ করা হয়। টোল আদায়ের মাধ্যমে সেই অর্থ তুলেও আনা হয়। দেশের ছোট–বড় প্রায় সব সেতুর ক্ষেত্রে এটিই আমরা দেখে থাকি। তার মানে দিন শেষে সেতুগুলোর মূল অর্থায়ন করে থাকে জনগণই। কিন্তু জনগণ কত বছর ধরে সেই টোল দিয়ে যাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়। টোলের ইজারা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া যায়। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর ক্ষেত্রে। সেতুটির টোল আদায় নিয়ে স্থানীয় লোকজন নানাভাবে ক্ষুব্ধ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৯১ সালে নির্মিত হয় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, যেটি স্থানীয় লোকজনের কাছে শম্ভুগঞ্জ সেতু নামে পরিচিত। ইতিমধ্যে নির্মাণ ব্যয়ের চেয়ে অনেক গুণ বেশি টোল আদায় করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। ফলে একাধিক নাগরিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। যদিও গত ২৫ জুন সেতুটির টোল আদায়ের জন্য নতুন করে আরও তিন বছরের ইজারা দেওয়া হয়েছে। ৫৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় সেই ইজারা পেয়েছে ‘মেসার্স মোস্তাফা কামাল এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে সেই ইজারা নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ করছে নাগরিক সমাজ।

৩৩ বছর আগে সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ছিল ৭২ কোটি টাকা। এত বছর ধরে ইজারার টাকার অঙ্কের হিসাব বলছে, সেই নির্মাণ ব্যয় উঠে গেছে অনেক আগে। শুধু আগের তিন বছরে ইজারা মূল্য ছিল ৪৭ কোটি টাকা। এতেই বোঝা যাচ্ছে, আগের ৩০ বছরে কী পরিমাণ টোল আদায় করা হয়েছে। এখন এসে টোল আদায়কে স্থানীয় বাসিন্দারা জুলুম হিসেবে দেখছেন। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ময়মনসিংহে এক সফরে গেলে তাঁকে এই সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবি জানায় নাগরিক সমাজ।

টোল আদায় নিয়ে স্থানীয় লোকজনের আপত্তির আরও বিষয় হচ্ছে, একই ব্যক্তিরা ১৫ বছর ধরে টোল আদায়ের ইজারা পাচ্ছেন। প্রভাবশালী কিছু মানুষ এই টোল আদায়ের সঙ্গে যুক্ত এবং টোলের ইজারা মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় এবং প্রভাবশালীরা তা ভাগ করে নেন। এ ছাড়া এই টোল আদায়ের কারণে সেতুকে কেন্দ্র করে যানজট তৈরি হয়। আর ভাড়া নিয়ে ময়মনসিংহ শহরে যেতে দিনে অনেকবার সেতু পার হতে গিয়ে ছোটখাটো যানবাহনচালকদের হাতে দিন শেষে কিছুই থাকে না।

আমরা আশা করব, টোল আদায় বন্ধের দাবি বিবেচনা করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ইজারা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হোক। যানজট সমস্যা দূর করতেও পদক্ষেপ নেওয়া হোক।