সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বাংলাদেশ। কিন্তু গাছপালা, নদী-খাল, পাহাড়-পর্বত—সবকিছুই সংকুচিত হয়ে পড়ছে মানুষের অপরিণামদর্শী আচরণে। সরকার বা সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর এখানে যে দায়িত্ব পালন করার কথা, তা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। বরং অনেক সময় তারা নিজেরাই পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। সেই ধারাবাহিকতায় অনেকগুলো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে গাজীপুর সদর উপজেলায় একটি পরমাণুকেন্দ্রে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের শিরিরচালা এলাকায় পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণাকেন্দ্রের ৪১টি কাঁঠালগাছসহ ৫৪টি গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার গাছগুলো কাটা শুরুও হয়েছে। স্থানীয় পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ও সংগঠকেরা এ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালেও গাছ কাটার সিদ্ধান্তেই অনড় থেকেছে কর্তৃপক্ষ।

ইনস্টিটিউটের গাজীপুরের শিরিরচালা আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাঠের বিভিন্ন জায়গায় গাছগুলোর অবস্থান। সম্প্রতি ৪১টি কাঁঠালগাছ, ১টি শিমুল, ৯টি আম ও ৩টি তালগাছ জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় সেখানকার কর্তৃপক্ষ। ১০টি শর্ত সাপেক্ষে গাছগুলো জ্বালানি কাঠ হিসেবে নিলামে বিক্রি করা হবে বলে জানানো হয়। ১৬ অক্টোবর একটি স্মারকে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন ইনস্টিটিউটের ভান্ডার কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। তার মানে এটি স্পষ্ট যে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ সজ্ঞানে গাছগুলো কাটার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা বলছেন, ‘রাষ্ট্র যেখানে সারা দেশে বৃক্ষরোপণের তাগিদ দিচ্ছে, সেখানে প্রায় শতবর্ষী গাছ বিক্রি করা হচ্ছে। পুরোনো ঐতিহ্য স্মৃতিবিজড়িত গাছগুলো বিক্রি করে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি অক্সিজেনের ঘাটতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে তালগাছ রোপণ করার জন্য বলা হলেও এখানে পুরোনো তালগাছ নিধন করা হচ্ছে। আমরা এমন অন্যায় সিদ্ধান্ত বাতিল চাই।’ আমরা তাঁদের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করছি।

গাছ কাটা শুরু হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকে গাছগুলো রক্ষা করতে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগও করেন। গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘পরমাণু শক্তি কমিশন যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।’ আমরা তাঁর কাছ থেকে এমন বক্তব্য আশা করি না। গাছ কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কি না, তা তিনি যাচাই–বাছাই করতে পারতেন। তেমনটি আমরা তাঁর মুখ থেকে শুনলাম না। কারণ, গাছ কাটার ক্ষেত্রেও সরকারি বিধিনিষেধ আছে। সেখানে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বলে কেউ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না, তা ভেবে দেখা দরকার। পরিবেশের জন্য হানিকর, এমন সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।