গাফিলতির ‘মাশুল’

সিডিএ ক্ষতিপূরণ দেবে কার টাকায়

২০০৮ সালে প্রণীত চট্টগ্রাম নগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) খালের পাড় থেকে ১২ ফুটের মধ্যে কোনো ধরনের স্থাপনা করা যাবে না বলে নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সেই নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে খাল ঘেঁষে বহু ভবন নির্মিত হয়েছে। এখন খাল উদ্ধার প্রকল্পের অংশ হিসেবে সেসব ভবন ভাঙতে গিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) ২২৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ভবনের মালিকদের। 

প্রশ্ন হলো, ড্যাপের নির্দেশনা অমান্য করে এসব ভবন নির্মিত হলো কীভাবে? এর মধ্যে খালের পাড় ঘেঁষে কোনো কোনো ভবন নির্মাণের সময়ই হেলে পড়ে। নগরে অবৈধ, অনুমোদনহীন ও নকশাবহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করার দায়িত্ব সিডিএর। আর খাল ও খালের দুই পাশ দেখাশোনা করে থাকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। 

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে, অবৈধ ভবন নির্মাণ ও খাল দখল বন্ধে সিডিএ ও সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নিল না কেন? দুই সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের লোকবলের অভাব আছে। অদ্ভুত যুক্তি। লোকবলের ঘাটতি বা অভাবের কথা তাঁরা আগে বললেন না কেন? আইন ভঙ্গ করে যখন একের পর এক ভবন তৈরি হয়েছে, তখন দুই সংস্থার কর্মকর্তারা রহস্যজনকভাবে নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন। 

এ ধরনের ভবনের নকশা কীভাবে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হলো, কিংবা নকশার বাইরে গিয়েও ভবন নির্মাণ করে মালিকেরা পার পেয়ে গেলেন, সেই প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে সিডিএ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশেই এসব ভবন নির্মিত হয়ে থাকে।

সিডিএর তথ্য অনুযায়ী, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় নগরের ৩৬টি খাল প্রশস্ত করা হচ্ছে। খালগুলোর পাশে নির্মাণাধীন ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য খালের পাড়ে নির্মিত ১ হাজার ৮০৪টি স্থাপনা ভেঙে ফেলতে হবে; যার জন্য সিডিএকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ২২৪ কোটি টাকা। একে ক্ষতিপূরণ না বলে ভুলের মাশুল বলা যেতে পারে। 

আমাদের স্পষ্ট কথা হলো আইনবহির্ভূতভাবে খালের তীর ঘেঁষে যেসব ভবন বা স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, তার জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে না। তবে আইনানুগভাবে নির্মিত ভবন ভাঙা হলে সে জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পেতেই পারেন। পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হোক, যারা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের পাশাপাশি সব ভবনের কাগজপত্রও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এমন নয় যে ‘সরকারকা মাল দরিয়া মে ঢাল’। সিডিএ যে ক্ষতিপূরণ দেবে, তার প্রতিটি টাকা জনগণের। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আগে নিরূপণ করতে হবে, কাদের অবহেলায় এ ঘটনা ঘটল। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

যেকোনো মহানগরের উন্নয়ন কিংবা সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনা থাকা দরকার। বিভিন্ন সংস্থা বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে উন্নয়ন প্রকল্প নিলে জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। বরং ক্ষতিপূরণের নামে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী বাড়তি সুবিধা আদায় করে নেবে।