সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ধসের ঝুঁকিতে হাসপাতাল

গজারিয়ায় দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ব্যবস্থা নিন

দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই উন্নয়ন আবার দৃশ্যমান না হলে গুরুত্ব তৈরি করে না—এমন মানসিকতা থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নই এখানে প্রাধান্য পেয়ে আসছে। ফলে উঠছে বিশাল বিশাল ভবন। অবকাঠামো উন্নয়ন করতে একশ্রেণির নীতিনির্ধারক, ঠিকাদার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে। কারণ, এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয়ের সুযোগ থাকে।

প্রকল্প পাস করে ভবন তুলে দিতে পারলেই হলো, এরপর সেই প্রকল্প বা ভবন আদৌ কোনো কাজে আসবে কি না, তা দেখার আর প্রয়োজন পড়ে না। যার কারণে স্বাস্থ্য খাতে নতুন নতুন ও বিশাল বিশাল ভবন পড়ে আছে, সেগুলো চালু হওয়ার কোনো নামগন্ধ নেই।

অন্যদিকে দেশে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি অনেক হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে—যেগুলো জরাজীর্ণ, পলেস্তারা খসে পড়ছে, সবকিছু ভাঙাচোরা। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নে। সেখানকার একটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন দেখলে মনে হবে এটি কোনো চিকিৎসাকেন্দ্র নয়, পুরোনো কোনো গুদামঘর। জরাজীর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্রটির নিজেরই চিকিৎসা দরকার।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, স্থানীয় মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য ১৯৩৬ সালে তৎকালীন স্থানীয় জমিদার আবদুল হক মজবুলোজ্জোহা চৌধুরী দুই কক্ষের এই চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলেন। পাকিস্তান শাসনামল পর্যন্ত জমিদার পরিবারের লোকজন এটির দেখভাল করতেন।

১৯৭৫ সালে সরকারিভাবে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মাঝখানে টিনশেড ঘর হয়, সেটির মধ্যেই এখনো চলছে ত্রিশের দশকে গড়ে ওঠা এ চিকিৎসাকেন্দ্রটি। সরকারীকরণের পরে একের পর এক সরকার বদলেছে, জনসংখ্যা বেড়েছে, রোগীর চাপ বেড়েছে কিন্তু উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি কোনো ভবন পায়নি। অথচ স্বাস্থ্য খাতে অসংখ্য নতুন ভবন পড়ে আছে।

হোসেন্দী বাজারে অবস্থিত চিকিৎসাকেন্দ্রটি মূলত চারচালা টিনশেডের দুই কক্ষের একটি ভাঙা ঘর। সেটির ভেতরে ও বাইরের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। টিনের চালেরও ঠিক নেই, দেয়ালে বড় ফাটল। শৌচাগার ও পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। ভেতরের আসবাবও ভাঙা। রোগীদের ভাষ্য, ‘ভেতরে ঢুকলে ভয় লাগে। মনে হয়, এই বুঝি হাসপাতাল ধইস্যা মাথায় পড়ব।’

এ ছাড়া বাজারসংলগ্ন হওয়ায় রোগীদের বাইরে দাঁড়ানোর জায়গা নেই, ভেতরে বসারও জায়গা নেই। বৃষ্টিতে হাসপাতাল পানিতে ভরে যায়। তখন বন্ধ করে রাখা ছাড়া উপায় থাকে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতিদিন শতাধিক মানুষ সেবা নিতে আসেন সেখানে।

হোসেন্দী ও টেঙ্গারচর ইউনিয়নের অন্তত ২০-২২ হাজার মানুষ এ হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। পাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরাও এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন। ফলে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটির গুরুত্ব অত্যধিক। ঐতিহ্যবাহী এ চিকিৎসাকেন্দ্র নতুন একটি ভবন পাবে, এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।