সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মশা মারার ভুল পদ্ধতি

মেয়রের উপলব্ধি এত দেরিতে কেন

মশকনিধনে পুরোপুরি ব্যর্থই বলা যায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। এ কারণে করোনা মহামারির পর ভয়াবহ এক ডেঙ্গু মৌসুম দেখল নগরবাসী। ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোয় দেড় শ জনের মতো মানুষ মারা গেছেন ডেঙ্গুতে, এর বড় অংশই শিশু।

একটি শহরে ডেঙ্গুতে একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছেন অথচ মশা মারার ক্ষেত্রে কোনো আন্তরিক প্রচেষ্টাই নেই; বরং কোটি কোটি টাকা খরচ করে অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত কর্মসূচির পাশাপাশি মেয়রদ্বয়ের বাগাড়ম্বর আমরা দেখি।

আর এখন একজন মেয়র মনে করছেন, মশকনিধনে নাকি এত দিন ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। বিষয়টি শুধু দুঃখজনকই নয়, নাগরিকদের জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে রীতিমতো তামাশা।

যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহরে গিয়ে মশকনিধন কার্যক্রম দেখে এ উপলব্ধি হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের। গত শনিবার ডিএনসিসির জনসংযোগ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলছেন, ‘আমরা এত দিন ভুল পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়ইনি; বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরন একই। তাই তারা সফল হলে অবশ্যই আমরাও সফল হব। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব।’

সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কর্মসূচিতে যে গলদ আছে, সেটি দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বারবার করে বলে এসেছেন। কিন্তু মেয়র আতিকুল সেটি বুঝলেন সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে, তা–ও এত বছর পর। এখন মিয়ামি থেকে অর্জিত জ্ঞানের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটিকে মশামুক্ত রাখতে চান তিনি। এ জন্য দ্রুত ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করার জন্য একটি পরীক্ষাগার স্থাপনও করবেন। এ ছাড়া মিয়ামি শহরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করবেন। এর মাধ্যমে ঢাকাকে মশামুক্ত করার কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।

এখন কথা হচ্ছে, মেয়র আতিকুলের এ উপলব্ধি ও সে অনুসারে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সেটিকে কতটা গুরুত্ব দেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সেখানকার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বিষয়টি নিয়ে আদৌ ভাবছেন কি না।

এটি অনস্বীকার্য, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সম্মিলিত ও কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া কোনোভাবেই এ মহানগরকে মশামুক্ত করা সম্ভব নয়। পৃথকভাবে যতই পদক্ষেপ বা কর্মসূচি গ্রহণ করা হোক না কেন, দিন শেষে আগের মতো অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই হবে না। এখানে সরকারের নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও অংশগ্রহণ জরুরি।