মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় অহংকারের নাম। এর নিদর্শন সংরক্ষণ আমাদের অস্তিত্ব ধারণের মতোই বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম ভিত্তি। সেটির অনুপ্রেরণা আমরা পেতে পারি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে।
এখন সেই জাদুঘর যদি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের এমন পরিস্থিতি আমরা দেখছি। সেখানে গেলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার কোনো সুযোগ নেই। কিছু বইপত্র আর চেয়ার-টেবিল ছাড়া সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কোনো নিদর্শন নেই। ফলে জাদুঘরটি পরিদর্শনে আসেন না কোনো দর্শনার্থী।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে তুরাগ নদের পাড়ে পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এর পাইলটকে মুক্তিযোদ্ধারা আটক করলে সেখানে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামে গ্রামে অভিযান চালায়। তাদের হামলায় সেখানে কয়েকজন গ্রামবাসী নিহতও হন। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সেসব ঘটনার স্মৃতি ধরে রাখতে তুরাগ নদের খেয়াঘাটের পাশে ২০২১ সালে গড়ে তোলা হয় সাকাশ্বর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর।
বটবৃক্ষের ছায়াসুনিবিড় পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন একটি একতলা ভবনও গড়ে তোলা হয়। জাদুঘরটি নির্মাণে সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ৬২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
কিন্তু জাদুঘর থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের কোনো কিছু জানার সুযোগ নেই। এমনকি কোনো ধরনের লোকবল নিয়োগ না করেই এ জাদুঘর চালু করা হয়। ফলে অর্ধকোটির বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাদুঘরটি দেখভালেরও কেউ নেই বললে চলে।
এর ফলে প্রশ্ন ওঠে, সুফলই যদি না দেয়, তাহলে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের কী প্রয়োজন। তা সরকারি বা রাষ্ট্রীয় অপচয় নয়? স্থানীয় সচেতন মহলের বক্তব্য, মানুষ কি দালান দেখতে সেখানে যাবে?
সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সামগ্রী রাখতে হবে। তবেই তো মানুষ সেখানে দেখতে যাবে। এর মাধ্যমে এলাকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। কিন্তু সেখানে তো কিছু নেই।
এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, বাজেট পেলেই নতুন বই কেনা হবে এবং স্মৃতি সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হবে। আমরা তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই। আমরা আশা করছি, জাদুঘরটির প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টিতে যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।