সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

মামলা–বাণিজ্য থেকে পরিত্রাণের উপায় কী

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রোববার মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় মামলা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। ওই সব মামলায় আসামি হলেই গ্রেপ্তার কিংবা বাসায় বাসায় গিয়ে হয়রানি করা যাবে না বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

৫ আগস্টের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের শাসনভার গ্রহণ করে। সেই সময়ে এ ধরনের মামলা–বাণিজ্য হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক ছিল না। পুলিশ বাহিনী প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল। বিভিন্ন স্থানে জনহেনস্তাও চলছিল। কিন্তু চার মাস পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কিংবা দেদার মামলা–বাণিজ্য চলতে দেওয়া যায় না।

ডিএমপি কমিশনার মামলা–বাণিজ্যের কারণে মোহাম্মদপুরের একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এ রকম পুলিশ কর্মকর্তা আরও অনেক আছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের পরিবার ও স্বজনেরা মামলা করেছেন। এই বক্তব্য আংশিক সত্য। অনেক বাদী বলেছেন, তাঁরা মামলার বিষয়ে কিছু জানেন না। থানায় নিয়ে গিয়ে মামলার কাগজপত্রে তাঁদের সই নেওয়া হয়েছে এবং ইচ্ছেমতো কেউ আসামিদের নাম বসিয়ে দিয়েছেন।

একই হত্যার ঘটনায় একাধিক মামলার প্রমাণও আছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। গাজীপুরে এক নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁর জীবিত স্বামীকে শহীদ দেখানোর অভিযোগে। পরে তিনি বলেছেন, তাঁকে চাকরির প্রলোভন দিয়ে মামলা করানো হয়েছে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বর্তমানে অহরহ ছিনতাই ও ডাকাতি হচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমাকে জানানো হয়েছে, ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা-পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে। চাঁদাবাজি হচ্ছে, কিন্তু সমাজ থেকে প্রতিরোধ করা না গেলে চাঁদাবাজি বন্ধ করা কঠিন। আপনারা কেউ চাঁদা দেবেন না। আমরা পুলিশ জনগণের পাশে থাকব।’

তাঁর এই আশ্বাসবাণী দেশবাসীকে কতটা আশ্বস্ত করবে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। ডিএমপি কমিশনার জনগণকে চাঁদা দিতে বারণ করেছেন। কিন্তু মানুষ তো স্বেচ্ছায় কাউকে চাঁদা দেয় না। অস্ত্রের  মুখে কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা নেওয়া হয়। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

থানায় গিয়ে ভুক্তভোগীরা মামলা করতে হয়রানির শিকার হবেন না, এই নিশ্চয়তা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অরাজনৈতিক অপরাধের বিষয়ে মামলা না নেওয়ার নির্দেশনা ছিল থানা–পুলিশের প্রতি। এ কারণে ভুক্তভোগীরা একান্ত বাধ্য না হলে মামলা করতে যেতেন না।

ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই সংস্কৃতির অবসান ঘটেছে, তা বলা যাবে না। নিজ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো দেখাতে সাধারণত থানা–পুলিশ মামলা নেয় না। যেখানে অপরাধকেই অস্বীকার করা হয়, সেখানে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসবে কীভাবে?

থানা–পুলিশের সঙ্গে এলাকার প্রভাবশালীদের একধরনের আঁতাত থাকে এবং তাঁরা নানাভাবে মামলার তদন্ত প্রভাবিত করেন। এই অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। দায়িত্ব নেওয়ার চার মাস পরও অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলার অবনতির দায় সাবেকদের ওপর চাপানো হবে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার অপকৌশলমাত্র। ঢালাও মামলা হলে কেবল নিরীহ মানুষই হয়রানির শিকার হন না, অপরাধের বিচারের পথও রুদ্ধ হয়ে যায়।