সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পরিকল্পিত পর্যটন কি এ দেশে হবে না

দেশের পর্যটন খাত নিয়ে সরকারিভাবে নানা নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কোনোভাবেই পৌঁছানো যাচ্ছে না। পর্যটনের নামে এখানে যে অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে, তাতে বরং নষ্ট হচ্ছে দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ। যার একটি বড় উদাহরণ হতে পারে সেন্ট মার্টিন। বঙ্গোপসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপ, জনসংখ্যাও অল্প।

কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকের ভারে রীতিমতো অস্তিত্বহীনতার মুখে পর্যটনকেন্দ্রটি। মুনাফালোভী পর্যটন ব্যবসায়ীদের কাছে সেন্ট মার্টিন যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস। যে যেভাবে পারছে, সেটিকে দ্রুত নিঃশেষ করে যাচ্ছে। সেই কাজে তাদের আরও সুযোগ করে দিচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারক ও কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে দৈনিক ৯টি জাহাজ ও ৫০টির বেশি দ্রুতগতির নৌযান স্পিডবোট ও ট্রলারে যাচ্ছেন সেন্ট মার্টিনে অন্তত ৪ হাজার ৫০০ জন পর্যটক। সাপ্তাহিক ও যেকোনো ছুটির দিনে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ থেকে ৭ হাজারে।

এদের মধ্যে বড় একটি অংশ দিনে দিনে ফিরে আসে। অর্ধেকের বেশি পর্যটক রাতযাপনের জন্য ওঠেন দ্বীপের ২৩০টির বেশি হোটেল-রিসোর্ট-কটেজে। অত্যধিক পর্যটকের চাপের অজুহাতে রিসোর্ট ও কটেজমালিকেরা ভাড়া দুই গুণ আদায় করছেন। খাবারের দামও অত্যধিক। এতে পর্যটনকেন্দ্রিক সব মহলের অতিরিক্ত মুনাফা হলেও বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এ দ্বীপের।

যেমন আগে সাগরের কচ্ছপেরা ডিম পাড়তে দলে দলে উঠে আসত এ দ্বীপের সৈকতে। এখন সেখানে কচ্ছপ দেখা যায় না বললেই চলে। এ ছাড়া প্রবাল দ্বীপ হিসেবে সেন্ট মার্টিন বিখ্যাত হলেও সেই ঐতিহ্যও হারিয়ে যেতে বসেছে।   

আমরা দেখতে পাই, দুই যুগ আগে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের আগমন সংখ্যা ছিল বছরে দুই শর মতো। এখন সেটি কয়েক লাখে গিয়ে ঠেকেছে। একই সময়ে জনসংখ্যা ৩ হাজার থেকে হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এক দশক আগে ১৭টি হোটেল থাকলেও সে সংখ্যা এখন প্রায় আড়াই শ। বছরের পর বছর বাড়ছে সেই সংখ্যা। আর কোনো পর্যটনবান্ধব দেশে এমনটি দেখা যায় বলে মনে হয় না।

কেন একটি পর্যটনকেন্দ্রে এত বেশি পর্যটক নিয়ে যেতে হবে? ছোট্ট একটি পর্যটনকেন্দ্রে এত বেশি জাহাজ ও স্পিডবোট চলাচল করা কতটা যুক্তিসংগত? একসময় অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ চালু করা হয়েছিল।

সেটি কেন কার্যকর থাকল না? জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর সবাই পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অভিযোগ আছে, অনেক কর্মকর্তা নিজেরাও নানাভাবে এখান থেকে ফায়দা হাসিল করে থাকেন। আমরা সেন্ট মার্টিনের ও এর প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্বের স্বার্থে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা, পরিকল্পনা চাই।