বেড়িবাঁধ টেকসই না হলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন ও সম্পদ কতটা নাজুক হয়ে পড়ে, সেপ্টেম্বর মাসের ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যা তার বড় দৃষ্টান্ত। সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধের একটা অংশ ধসে পড়ায় যে বন্যা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকার ফসল, মাছ ও অন্যান্য সম্পদ। এরপরও উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দৃষ্টিকটুভাবে অবহেলা ও গাফিলতি করে চলেছে। খুলনার কয়রার ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পটি তার চাক্ষুষ উদাহরণ।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, খুলনার কয়রা উপজেলাকে নদীভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতে ৩২ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা ও সাতক্ষীরা–২ বিভাগ। পুনর্বাসন নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ২৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হতাশার বিষয় হচ্ছে, এ প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে, অথচ শেষ হয়েছে মাত্র ২০ ভাগ।
প্রশ্ন হচ্ছে, যে বেড়িবাঁধ মানুষের জীবন ও সম্পদের রক্ষাকবচ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়, সে প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন গুরুতর অবহেলা কেন? পাউবোর বক্তব্য হলো দুই বছর আগে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য হলো আর্থিক সংকট কিংবা ঠিকমতো বরাদ্দ না পাওয়ায় তাঁরা কাজ করতে পারছেন না।
জনগণের করের অর্থে প্রকল্প নেওয়া হয়, সেই প্রকল্প সময়মতো না হলে তার খেসারত জনগণকেই দিতে হয়। প্রকল্প যদি ঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করা না–ই হবে, তাহলে প্রকল্পের সময় নির্ধারণ কিসের ভিত্তিতে হলো? বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, সরকারি প্রকল্পে বারবার সময় বাড়ানো হয়েছে, তাতে প্রকল্পের ব্যয়ও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। তাতে লাভবান হন ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত কতিপয় রাজনীতিবিদ এবং প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা। প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতি ও উৎকোচের যে দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছিল, তাতে জনগণকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে।
এ বছরের মে মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা—এই তিন উপকূলীয় জেলার ২ হাজার ৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মানে অরক্ষিত মানুষের জীবন ও সম্পদ। কয়রার মানুষ আশা করেছিলেন স্থায়ী বাঁধ হলে তাঁদের দুর্দশা কাটবে। কিন্তু কাজের শম্বুকগতি তাঁদের হতাশা আর দীর্ঘশ্বাসই বাড়াচ্ছে।
যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে আর দুই মাস বাকি, সেই প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২০ ভাগ! কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর দায় পাউবো এড়াতে পারে না।