সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর ঘাটতি

সংকট দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

জন্মহার কমিয়ে আনার উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার বিনা মূল্যে মাঠপর্যায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এবং তার সুফলও দেশবাসী পেয়েছে। এই কর্মসূচিসহ নানা সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে জন্মহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ১৯৭১ সালে দেশে মোট প্রজননের হার (টিএফআর) ছিল ৬ বা এর কাছাকাছি। বর্তমানে এই হার ২.৩। ২০৩০ সালের মধ্যে অপরিকল্পিত জন্ম ও মাতৃমৃত্যু দুটোই শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাঠকর্মীরা পাঁচ ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী দম্পতিদের মধ্যে বিলি করেন; যথাক্রমে কনডম, খাওয়ার বড়ি, আইইউডি, ইনজেক্টেবলস ও ইমপ্ল্যান্ট। কনডম ছাড়া বাকি সামগ্রীগুলো নারীদের ব্যবহারের জন্য। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কনডম ও বড়ি। অধিদপ্তরের দেওয়া হিসাবে প্রতি মাসে মাঠকর্মীরা ৫০ লাখ ৩৫ হাজার কনডম ও ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার সাইকেল বড়ি দম্পতিদের কাছে পৌঁছে দেন।

গত মঙ্গলবার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, দেশের ১০৫টি উপজেলায় কনডম নেই। খাওয়ার বড়ি নেই ৪৪৫টি উপজেলায়। সরকারি ও বেসরকারি সূত্রে জানা গেছে, বিত্তবান ও সচ্ছল দম্পতিরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রী সংগ্রহ করে থাকেন। দরিদ্র শ্রেণির দম্পতিদের কাছে সরকারি উদ্যোগে এসব সামগ্রী পৌঁছানো হয়। এই শ্রেণির দম্পতির সন্তান নেওয়ার হারও বেশি।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রাজস্ব বাজেট থেকে খরচ করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। গত বছর মন্ত্রণালয় সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধা দেয়। ফলে প্রয়োজনের সময় রাজস্ব বাজেট ব্যবহার করতে পারেনি অধিদপ্তর। অন্যদিকে উন্নয়ন বাজেট থেকে কিনতে হলে প্রক্রিয়া শুরু করে শেষ করতে কয়েক মাস লেগে যায়। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইফুল্লাহিল আজম বলেন, ‘আগে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা সংকট দূর করে যাননি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি সংকট কাটানোর।’

উন্নয়ন বাজেট থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী কেনার জন্য এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৭ মার্চ দরপত্র মূল্যায়ন করা হয়। যোগ্য ও সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে দরপত্র বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এরপর বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।

দরপত্র আহ্বান ও গ্রহণের ক্ষেত্রে এই অসাধু প্রক্রিয়া কারা গ্রহণ করলেন? বর্তমান মহাপরিচালকের ভাষ্য অনুযায়ী সাবেকেরা দায়ী। আবার সাবেকেরা অন্য কোনো অজুহাত দেখাবেন। যাঁরা বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা মহল বিশেষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এ রকম একটি মহৎ উদ্যোগ মাঝপথে থেমে যাবে, সেটা কখনোই কাম্য নয়।

অপরিকল্পিত সন্তান ধারণের সঙ্গে মাতৃমৃত্যুরও একটি যোগসূত্র আছে। অপরিকল্পিত সন্তান ধারণ যত বাড়বে, তত মাতৃমৃত্যুর হারও বাড়বে। অর্থাৎ দুই দিক থেকেই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, ঠিক সময়ে হাতের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী না থাকার কারণে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ বাড়বে। ফলে মাতৃমৃত্যুও বেড়ে যাবে।

দরপত্র নিয়ে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, আশা করি, সেটা দ্রুত নিরসন করে অবিলম্বে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজনীয় সব জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।