সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ভেরিফিকেশন নিয়ে আর প্রশ্ন না উঠুক

ছাত্র–জনতার যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলো, সেটি শুরুই হয়েছিল সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের মধ্যে বরাবরই আমরা দেখে এসেছি, পুলিশ বা নিরাপত্তা সংস্থার নেতিবাচক প্রতিবেদনের (ভেরিফিকেশন) কারণে নিয়োগ আটকে যাওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এমন আটকে যাওয়া আড়াই শতাধিক চাকরিপ্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে এবং তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় একটি সিদ্ধান্ত।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েও নেতিবাচক প্রতিবেদনের (ভেরিফিকেশন) কারণে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে নাম না আসায় আটকে গেছেন এমন ২৫৯ জন চাকরিপ্রার্থী গত বুধবার নিয়োগ পেয়েছেন। এদিন দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এসব প্রার্থীকে আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন ক্যাডারে মেধাক্রমে ১ থেকে ১০ অবস্থানে থেকেও অনেকে নিয়োগ পাননি। প্রশাসনকে চরমভাবে দলীয়করণ করতে গিয়ে এসব চাকরিপ্রার্থীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। দীর্ঘ তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি থেকে শুরু করে অংশগ্রহণ পর্যন্ত একজন চাকরিপ্রার্থীকে কী অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়, তা আমাদের কারও অজানা নয়। শুধু প্রার্থীরই নয়, তাঁর পরিবারের স্বপ্নও যুক্ত হয়ে পড়ে একটি সরকারি চাকরির জন্য। উপমহাদেশজুড়ে এই বাস্তবতাই আমরা দেখি। ফলে যখন পরীক্ষার সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে শুধু ভেরিফিকেশনের কারণে একজন প্রার্থীর নিয়োগ আটকে যায়, এর চেয়ে অন্যায় আর কী হতে পারে। বিগত সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বারবার ওঠে এবং আমরা এ নিয়ে সম্পাদকীয়ও লিখেছি।

গত ২৮ জুলাই প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয়ের বিবেচনায় বাদ দেওয়ার বিষয়টি সংবিধান–পরিপন্থী। সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে যে বিষয়গুলো বিবৃত আছে, সেগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে না। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকারীরা যাতে গণকর্মচারী হয়ে না যান, এ জন্য সেটি চালু করা হয়েছিল। সেটি এখনো চালু রাখা হয়েছে। এটি করার ফলে দলীয়করণ তৈরি হয়। এতে প্রশাসনের মেধাভিত্তিক ও গুণগত মানের হানি হয়।

রাজনৈতিক পরিচয় যেটিই হোক, রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিকের অধিকার আছে সরকারি চাকরি পাওয়ার। ভেরিফিকেশনের কারণে সেখানে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, সেটি অবশ্যই অধিকার হরণ এবং মানবাধিকারহীনতাও। প্রশাসনকে দলীয়করণ করা কোনোভাবেই একটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়, তা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গত ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা এমন পরিস্থিতিতে আর ফেরত যেতে চাই না। চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দল–মত ও রাজনৈতিক পরিচয় কোনোভাবেই গুরুত্ব পেতে পারে না।