সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বাড়ির আঙিনায় হাঁটুপানি

গৃহকর-খাজনার বিনিময়ে প্রাপ্তি কি এই

জামালপুরের মাদারগঞ্জ কি বাংলাদেশের বাইরের কোনো উপজেলা? যদি তা না-ই হয়, তাহলে জগলু মোহন চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের এই দুর্দশা কেন? এখানে কি সরকার, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা কারও পা পড়ে না?

প্রথম আলোর জামালপুর প্রতিনিধির লেখা, ‘বাড়ির আঙিনায় আট মাস ধরে হাঁটুপানি, দুর্ভোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি পড়লে যে কারও তা–ই মনে হবে। প্রথম আলো লিখেছে, নালার মুখ বন্ধ থাকায়, আট মাস ধরে সাবেক পুলিশ সদস্য জগলু মোহন চৌধুরীর বাড়ির সামনে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি জমে আছে।

অবসরে যাওয়ায় জগলু মোহন একটি মুদিদোকান দিয়েছেন। প্রতিদিন হাঁটুপানি মাড়িয়ে তাঁকে দোকানে যেতে হয়। তীব্র দুর্গন্ধে প্রাণ যায়। সারা দিন বাড়ির আঙিনায় ও ভেতরে মশা-মাছি ভনভন করে। বাড়ির সদস্যরা ঘরবন্দী হয়ে আছেন। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হন না। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বারবার অনুরোধ করেও কাজ হয়নি।

বাংলাদেশের মানুষের জীবনের দাম সবচেয়ে কম, এই কথা সবাই জানে এখন। মানুষের যে মানবিক মর্যাদা বলে একটা জিনিস আছে, সেটা এ দেশের কর্তৃপক্ষ কেন গ্রাহ্য করে না? করলে তো জগলু মোহন চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের এমন দিন দেখতে হতো না। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর মাদারগঞ্জে যোগাযোগ করে জানা যায়, পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। যদিও জগলু মোহন চৌধুরী একজন ব্যক্তি। কিন্তু একজন ব্যক্তিকেও কেন এভাবে বসবাস করতে হবে? জগলু মোহনের প্রতিবেশীরাও এত দিন ভুগেছেন। তাঁরা বাড়ির আঙিনায় মাটি ফেলে উঁচু করে নিয়েছেন।

সিধুলী ইউনিয়ন পরিষদ পানিনিষ্কাশনের এই নালা নির্মাণ করেছে। এই নালা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে দিয়ে একটি ডোবায় গিয়ে শেষ হয়। জগলু মোহন চৌধুরীর বাড়িটি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে।

প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে দিয়ে নালা তৈরি ও ডোবার সঙ্গে এর সংযুক্তির পরিকল্পনা কে করেছে? এই কাজে তো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সম্পৃক্ততা থাকার কথা। তারা ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানিনিষ্কাশনের নালাটি এমন জায়গায় তৈরি করেছে কেন? এতে কি রোগী ও চিকিৎসকেরা বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন? দ্বিতীয়ত, মাহবুবুর রহমান ওরফে মিরন বলেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে ড্রেনের মুখে মাটি পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এক বর্ষা মৌসুম গিয়ে আরেক বর্ষা সমাগত। নালার মুখ পরিষ্কার করা কত কঠিন?

এ জন্য কি প্রয়োজন হাজারখানেক শ্রমিক? হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা? দরপত্র বিজ্ঞপ্তি? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি? কিছুই না। কাগজে-কলমে নালা পরিষ্কার করা তো পরিষদের কাজ। তারা তাহলে করছেটা কী? জগলু মোহন চৌধুরী কি সরকারের ঘরে ভ্যাট-ট্যাক্স জমা দেন না? গৃহকর বা খাজনা? সেগুলো কিসের বিনিময়ে গ্রহণ করছে সরকার বাহাদুর? এই প্রশ্নের জবাব আছে?