সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

দুর্নীতি, অদক্ষতার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে কি

চট্টগ্রাম ওয়াসা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত। প্রথম আলোয় গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত তাদের নিয়ে ২১টি সংবাদ ছাপা হয়েছে। সেসব সংবাদের মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার সদ্য বিদায়ী এমডির ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা, আর্থিক দুর্নীতি, এক দশকে ৯ বার পানির মূল্যবৃদ্ধি, পানি না দিয়ে বিল পাঠানো…কী নেই?

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশনার পরও চট্টগ্রাম-১ দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্তারা ছিলেন নির্বিকার। ১৪ বছর ধরে টিকে থাকা চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির আমলে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাঁচটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়। কোনো প্রকল্পের কাজই নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়নি। ব্যয়ও বাড়াতে হয়েছে তিনটির। নগরে পানির সংকটও কাটেনি। এ খতিয়ানের ইতিহাস আরও দীর্ঘ। গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসায় যত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, একটিও যথাসময়ে শেষ হয়নি। ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম ওয়াসায় প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া সেই এমডি। সেসব সিন্ডিকেট কি স্বরূপে বহাল এখনো?

সর্বশেষ নগরবাসীকে দূষণ থেকে রক্ষায় ২০১৮ সালে ‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। নির্মাণকাজ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন বছর পর। দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও প্রায় অর্ধেক কাজ বাকি। বাকি কাজ শেষ হতে আরও অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে। শুরুতে প্রকল্পের যে ব্যয়, তা ৬০০ কোটি টাকা বেড়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে দাঁড়াবে ৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম নগরের ২০ লাখ মানুষ প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার কথা।

আমরা জানি, কোনো প্রকল্প চলমান থাকার সময় সংশ্লিষ্ট সেবায় কী রকম বিঘ্ন ঘটে। প্রকল্প চলমান সময়ে এই ২০ লাখ মানুষের দুর্ভোগ আমরা সহজেই কল্পনা করতে পারি। কেন একটি প্রকল্প সন্তোষজনকভাবে কার্যকর না হওয়া সত্ত্বেও একইভাবে আবার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, যার পরিণতি ঘটেছে আগের মতোই? দক্ষতার ঘাটতি কোথায়? এই চক্র থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী? এই প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় ঋণের টাকায়। সেই টাকা শোধ জনগণকেই করতে হয়। কিন্তু বিনিময়ে জোটে দুর্ভোগ।

চট্টগ্রাম ওয়াসায় অনিয়মের তদন্ত করতে গত ৭ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের কমিটি তৈরি হয়। জানামতে, সেই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে বর্তমান সমস্যাগুলোর কতটুকু প্রতিফলন ঘটেছে, তা–ও জানা প্রয়োজন। আশা করা যায়, বর্তমান সরকার এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে। মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করবে।