সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জগন্নাথপুরের ৮৪ সড়ক

বিধ্বস্ত রাস্তাগুলো দ্রুত ঠিক করুন

একটি উপজেলায় ১৮০ কিলোমিটার সড়ক এক বছর ধরে যদি বিধ্বস্ত থাকে, তাহলে সেই এলাকার জনজীবন কতটা বিপর্যস্ত হতে পারে, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়। একুশ শতকের বাংলাদেশে এই ধরনের এলাকার অস্তিত্ব সরকারের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট।

এ অবহেলিত ও উপেক্ষিত উপজেলাটি হলো সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর। গত বছরের জুনে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সেখানকার ৮৪টি সড়কের প্রায় ১৮০ কিলোমিটার জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু সেসব রাস্তা আজও সারাই করা হয়নি।

প্রথম আলোতে প্রকাশিত এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে যে ছবি ছাপা হয়েছে, তা ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ সম্পর্কে নীতি নির্ধারকদের ধারণা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি সড়ক ভেঙে রীতিমতো ছোট একটা খাল হয়ে গেছে। ফলে কোনো ধরনের যানবাহনই সেখান দিয়ে চলাচল করতে পারছে না।

প্রতিবেদনে উপজেলার বাকি সড়কগুলোর যে বর্ণনা এসেছে, তাতে গোটা এলাকাটিকে একটি বিচ্ছিন্ন জনবসতি বলে প্রতীয়মান হয়। অধিকাংশ সড়কের জায়গায় জায়গায় পিচ উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। সড়কজুড়ে শুধু গর্ত আর গর্ত। সেখানে ভ্যান–রিকশা চালানোও ঝুঁকিপূর্ণ ও মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমসাধ্য হয়ে উঠেছে।

দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ বিবেচনায় এ অবস্থার মধ্য দিয়ে এই যুগে বড়জোর এক মাস-দুই মাস চলা যেতে পারে। কিন্তু টানা এক বছর ধরে এভাবে রাস্তাগুলো পড়ে আছে এবং সেগুলো সংস্কারে দৃশ্যমান কোনো তোড়জোড় নেই—সেটি কোনো বিবেচনায় কাম্য হতে পারে না। বাস্তবতা হলো, সেই অকাম্য বিষয়টিই এখানে ঘটছে।

এলাকাবাসীর দিক থেকে এলজিইডি দপ্তরে বারবার জানানো হলেও কোনো সুরাহা মিলছে না। এটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে এলাকার উৎপাদিত দ্রুত পচনশীল শাকসবজি, মাছ, দুধ কিংবা ভারী পণ্য আনা–নেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।

দিনের পর দিন এভাবে চলার কারণে এটি গোটা এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সন্তানসম্ভবা কিংবা গুরুতর আহত বা অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার মতো জরুরি বিষয়গুলোও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এমনিতেই ভয়াবহ বন্যার কারণে স্থানীয় দরিদ্র বাসিন্দারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সেই ক্ষতি থেকে দ্রুত উত্তরণের জন্য সরকারের অনেক আগেই সড়ক সংস্কার করা উচিত ছিল। তা না করায় তাদের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় এলজিইডির প্রকল্প চূড়ান্ত করে দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু করা জরুরি।