সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ডুমুরিয়ার অদম্য মানুষ

স্বেচ্ছাশ্রমের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয় না। সেটি অবহেলা, দায়িত্বহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা সামর্থ্যের অভাব—অনেক কারণেই হতে পারে। তবে অনেক সময় নাগরিকেরা নিজেরাই এগিয়ে এসে তখন নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে নেমে যান। যেমনটি ঘটেছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোন ইউনিয়নে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে।    

মাগুরাঘোন ইউনিয়নের ঘোষড়া গ্রামটি তুলনামূলকভাবে কিছুটা নিচু হওয়ায় পার্শ্ববর্তী তালা, কেশবপুর উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গার পানি এসে জমা হয় ওই গ্রামে। জলকপাটের কারণে পলি পড়ে ভদ্রা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় গ্রামের খালটি দিয়ে পানিও সরতে পারছে না। প্রায় তিন মাস জলাবদ্ধ অবস্থায় কাটিয়েছেন তাঁরা। সেখানকার একটি সড়ক উঁচু করলেই জলাবদ্ধতার সমস্যা আর থাকে না। কিন্তু সেই সড়ক উঁচু করবে কে? বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কূলকিনারা পান না এলাকাবাসী। তখন একটি মৃত্যু তঁাদের অন্তরে নাড়া দিয়ে ওঠে। এক বয়োবৃদ্ধের মৃতদেহ কবর দেওয়ার জন্য শুকনো জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না।

গ্রামের সবাই মিলে রাস্তার ধারে বালু ফেলে উঁচু করে সেখানে দাফন করা হয় জামাল সরদারকে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন জলাবদ্ধতা থেকে গ্রামকে রক্ষা করার। তখন কেউ শ্রম দিয়ে, কেউ অর্থ দিয়ে শুরু হয়ে যায় রাস্তা নির্মাণের কাজ। আশপাশের অনেক মাছের ঘের ব্যবসায়ী এ কাজে বাধা দিয়েছিলেন তাঁদের। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে একতার বলে সফল হলেন গ্রামবাসী। আমরা তঁাদের অভিবাদন জানাই।

গ্রামবাসীর টাকা ও স্বেচ্ছাশ্রমে দেড় মাসে নির্মিত হয়েছে চার ফুট উঁচু সড়ক। প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কটির নির্মাণকাজ এখনো চলমান; তবে চারদিকের পানি আটকানো হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা হামিদুর রহমান মোড়ল বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে সড়কটি উঁচু করে নির্মাণ করার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো দপ্তরই সেই কাজে সাড়া দেয়নি। পরে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সড়ক তৈরি করে ফেলেছি। প্রতিটি বাড়ি থেকে প্রতিদিন একজন করে শ্রম দিতেন। সবার সম্মিলিত চেষ্টাতেই সড়ক যেমন উঁচু করা সম্ভব হয়েছে, তেমনি গ্রামের মধ্যে পানি প্রবেশ বন্ধ করা গেছে।’

সড়ক নির্মাণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘দুর্যোগের সময় যদি সবাই স্বেচ্ছাশ্রম না দেয়, সবাইকে সম্পৃক্ত করা না যায়, তাহলে দুর্যোগ মোকাবিলা করা কঠিন। সড়কটি টেকসই রাখতে এলাকাবাসী পাইলিং করার দাবি জানিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই কাজ করে দেওয়া হবে।’

আমরা আশা করব, প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাস শিগগিরই বাস্তবে পরিণত হবে।