সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

স্থানীয় সরকার সংস্থা

জনগণের ভোগান্তি দূর হোক

স্থানীয় শাসন সম্পর্কে সংবিধানের ৫৯ ধারায় বলা আছে, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাকাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।’ বাস্তবতা হলো, আমাদের পূর্বাপর সব সরকারই স্থানীয় শাসন তথা স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে হাতের মুঠোয় রাখতে সচেষ্ট থেকেছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ও প্রশাসনিকভাবে স্বনির্ভর হোক, সেটা কেউ চাননি।

৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় সরকার বা শাসন বলতে কিছু নেই। আগেও কতটা ছিল, সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পরিষদগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দেওয়া না হলেও অনেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য পলাতক। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার সংস্থার অধীন জনগণের দৈনন্দিন কাজগুলো করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’-এর তথ্য অনুসারে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৭টি জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ সংশোধনের জন্য ঝুলে ছিল। এর মধ্যে ১৪২টি মৃত্যুনিবন্ধন ও বাকিগুলো জন্মনিবন্ধন সংশোধনের আবেদন। বিভিন্ন স্থানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে হামলার জন্য নিবন্ধনকাজ বন্ধ ছিল। নতুন করে কাজ শুরু হলেও আবেদনপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমছে না।

কেবল জন্ম ও মৃত্যুসনদ নয়, আরও অনেক কাজে নাগরিকদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে যেতে হয়। কিন্তু আগস্ট অভ্যুত্থানের পর সেই কাজ কোথাও বন্ধ আছে, কোথাও চলছে অতি ধীরগতিতে। নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত অনেক কাজ করে থাকে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো। সড়ক সংস্কার, সড়কে বাতি লাগানো, গৃহস্থ আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, নদী-নালা পরিষ্কার, ডেঙ্গু রোধ—এমন অনেক কাজ রয়েছে, যা নিয়মিত সম্পাদনা বা রক্ষণাবেক্ষণ করা না গেলে বিবিধ সমস্যা তৈরি হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থায় খণ্ডকালীন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছিল, যাঁদের মধ্যে জেলা প্রশাসকও আছেন। একজন খণ্ডকালীন প্রশাসকের পক্ষে সিটি করপোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের কাজ চালানো সম্ভব নয়, এটা দেরিতে হলেও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা টের পেয়েছেন। বুধবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, স্থানীয় সরকারের চার স্তরে শিগগিরই ‘ফুল টাইম’ প্রশাসক বসানো হবে।

কিন্তু কথা হলো, এতগুলো স্থানীয় সরকার সংস্থায় বিপুলসংখ্যক প্রশাসক নিয়োগের মতো জনবল সরকারের আছে কি না। যদি না থাকে, তাহলে উপদেষ্টার আশ্বাসবাণী আশ্বাসেই সীমিত থাকবে; জনগণের ভোগান্তি কমবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত জনগণকে পরিষ্কারভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা। পূর্ণকালীন লোকবল দেওয়ার পরও দেখা যাবে যে তাঁরা কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। ফলে জনগণের ভোগান্তির অবসান হবে না। স্থানীয় সরকারের বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। সরকার অনেক বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করলেও স্থানীয় সরকার নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। এ থেকেই স্পষ্ট, স্থানীয় সরকার বা শাসনকে তারা কতটা গুরুত্ব দেয়।

 স্থানীয় সরকারকে দুর্বল রেখে পৃথিবীর কোনো দেশেই গণতন্ত্র টেকসই হয়নি, বাংলাদেশেও সেটা আশা করা যায় না।