বানভাসিদের কাছে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছান

উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হওয়া সত্ত্বেও পানিবন্দী মানুষের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সহযোগিতা না পৌঁছানোর বিষয়টি যারপরনাই দুঃখজনক। বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষেরা এমন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের সংকটে পড়েছেন যে নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটে যাচ্ছেন।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও বেড়েছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিন শতাধিক চর কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন চর ও বাড়িঘর ডুবে যাচ্ছে। বানভাসি মানুষের ঘরবাড়িতে কোথাও বুকসমান পানি, কোথাও গলাসমান পানি। তাঁদের কেউ কেউ স্থানীয় বিদ্যালয়, ঈদগাহ মাঠ, কেউ কেউ নৌকা, কলাগাছের ভেলা ও ঘরের মাচায় বাস করছেন।

এসব চরের দুই লাখের বেশি মানুষ বর্ণনাতীত দুর্ভোগে পড়েছেন। কুড়িগ্রাম এমনিতেই দেশের সবচেয়ে অবহেলিত জেলা, দারিদ্র্যের হার সেখানে সর্বোচ্চ। আর এসব চরের বাসিন্দারা মূলত হতদরিদ্র। এক দিন কাজ না করলে তঁাদের পক্ষে খাবার জোগাড় করা কঠিন। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় তাঁরা কাজে যেতে পারছেন না। ফলে এটা বলা চলে যে এই বন্যা তাঁদের জীবন ও জীবিকার সংকটরূপে দেখা দিয়েছে।

খাদ্যসংকটের পাশাপাশি বন্যার পানি দীর্ঘদিন থাকায় সেখানকার মানুষেরা নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গোখাদ্য না মেলায় গরু-ছাগলের মতো গবাদিপশুও খাদ্যসংকটে পড়েছে। জেলা প্রশাসক অবশ্য বলছেন, জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ আছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র অনেকটা ভিন্ন। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছায়নি।

ভাটির দেশ হওয়ায় বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশের মানুষের নিস্তার নেই। কিন্তু বন্যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে বন্যায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচিতে সরকারের নজর ও মনোযোগ কম। তা ছাড়া বহুদিন ধরেই দুর্যোগবিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, বন্যার সময় চাল–ডালের মতো পণ্য দিয়ে যে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়, সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বানভাসিদের জন্য তেমন কাজে আসে না। কেননা রান্না করার জন্য যে উপকরণ দরকার, বানভাসি মানুষের পক্ষে সেটা জোগাড় করা কঠিন। ফলে বন্যার মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে নতুন করে ভাবতে হবে।

আমরা আশা করি, কুড়িগ্রামের বানভাসি মানুষের কাছে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো হবে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, পানিবাহিত রোগব্যাধি ও গোখাদ্য নিয়ে তাঁরা যে সংকটে পড়েছেন, তার আশু সমাধান করা হবে।