প্রশাসনকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ সময় কোনো থানায় পুলিশ না থাকায় গোটা দেশের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট লোকজনের পাশাপাশি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাঁদের বাড়িঘর লুটপাট ও ভাঙচুরের শিকার হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় সাঁওতাল, ওঁরাও, মুন্ডা, পাহাড়িয়াসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লোকজন যেভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এখনো এসব মানুষ আতঙ্কে আছেন। 

সরকার পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে চরম বল প্রয়োগ করে আন্দোলন দমন করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়। এতে অনেক থানা ও পুলিশ আক্রান্ত হয়। ফলে থানাগুলো পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। এতে অনেক এলাকায় কিছু মানুষ যে দুর্বৃত্তপনা তৈরি করে, তার হাত থেকে রেহাই পাননি সমতলের জাতিগত সংখ্যালঘুরাও। প্রথম আলোকে উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও উচ্চ আদালতের আইনজীবী প্রভাত টুডু বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় আদিবাসীদের ওপর হামলা, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট করা হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুণ গ্রামের তারামনি ওঁরাওয়ের বাড়ি ও দোকান লুটপাট করা হয়েছে। ভাদ্রগ্রামের সুধীর তিরকির বাড়ি ও দোকান লুট হয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলার অলক ওঁরাওকে হত্যাচেষ্টায় মারধর করা হয়েছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপির যুগিডাইং গ্রামের ৮ থেকে ১০টি ওঁরাও পরিবারের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পাকড়ি ইউপির দেওয়ানপাড়ার গণেশ কিসকুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে নগদ অর্থসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করা হয়েছে।

এ ছাড়া রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের পল্লিতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা থেকে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন মেয়েরা। ছেলেরা দৌড়ে পালিয়ে জীবন বাঁচান। হামলাকারীরা বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার পতনের পর এ ঘটনা ঘটলেও গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ায়নি প্রশাসনের কেউ।

মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য, তিনি শনিবার বিষয়টি জানতে পেরেছেন। এর আগে কেউ তাঁকে জানায়নি। গত শুক্রবার উপজেলার রাজনৈতিক নেতা, থানার ওসি, সেনা কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। সেখানেও কেউ বিষয়টি তোলেননি। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

আক্রান্ত এলাকাগুলোতে ভুক্তভোগীরা এখনো আতঙ্কে আছেন। সেসব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আমরা হতাশা প্রকাশ করছি। যাঁর যাঁর এলাকায় খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর খবর নিন। তাঁদের পাশে দাঁড়ান। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আমরা এ ব্যাপারে আর কোনো অবহেলা বা দায়িত্বহীনতা চাই না।