পার্বত্য চট্টগ্রাম শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধায় পিছিয়ে আছে, তা সবার জানা। দুর্গম পাহাড়ে থাকা বাসিন্দাদের জন্য মৌলিক এসব সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল। এর জন্য তাদের উপজেলা বা জেলা শহরে আসতে হলে সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। শিক্ষাসুবিধা নিশ্চিত করতে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জেলা বান্দরবানের সাতটি জেলায় আটটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে একাডেমিক ও ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। এসব ভবনের কাজ কবে শেষ হবে, কেউ জানেন না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পাঁচ বছর আগে বান্দরবান উচ্চবিদ্যালয়, বান্দরবান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রুমা উচ্চবিদ্যালয়, থানচি উচ্চবিদ্যালয়, রোয়াংছড়ি উচ্চবিদ্যালয়, লামা উচ্চবিদ্যালয়, আলীকদম উচ্চবিদ্যালয় ও নাইক্ষ্যংছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের জন্য আটটি ছয়তলা বিদ্যালয় ভবন, আটটি পাঁচতলাবিশিষ্ট ছাত্রাবাস এবং ছয়টি তিনতলার ঊর্ধ্বমুখী একাডেমিক ভবনসহ মোট ২২টি ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে থানচি ও লামা উচ্চবিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের কাজ শুরু হয়নি। শুরু হয়নি সাত উপজেলার আটটি বিদ্যালয়ের আটটি ছাত্রাবাসের কাজও।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, কাজের প্রাক্কলিত মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যে দুটি বিদ্যালয় ও আটটি ছাত্রাবাসের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে না পারায় মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। জায়গার সমস্যা, পুরোনো ভবন অপসারণে জটিলতা, দুর্গমতা এবং অশান্ত পরিস্থিতির কারণে কাজের অগ্রগতি কম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব কারণে পাঁচ বছর ধরে প্রকল্পটি ঝুলে থাকা কতটা যুক্তিসংগত?
পাহাড়ের দুর্গম এলাকা থেকে অনেক শিক্ষার্থী জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে পড়তে আসে। আবাসন সুবিধা না থাকার কারণে বাধ্য হয়ে নিজ খরচে ভাড়া বাসায় থাকতে হয় তাদের। সবার সে সামর্থ্য না থাকায় অনেকে প্রাথমিক শিক্ষার পর ঝরে পড়ে। ফলে একাডেমিক ভবনসহ ছাত্রাবাসগুলো যথাসময়ে নির্মিত হওয়া জরুরি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, কাজে তাঁদের কোনো অবহেলা নেই। পুরোনো কাঠামো ভেঙে নতুন ভবন করতে অনেক দীর্ঘসূত্রতা, করোনা মহামারি, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে সমস্যাসহ নানা কারণে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। তবে এবার একটা পর্যায়ে এসেছে এবং কাজের অগ্রগতি হবে। জুনের মধ্যে কয়েকটি বিদ্যালয় ভবন হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।
আমরা কাজের অগ্রগতির বিষয়ে আশাবাদী হতে চাই। সব কটি ভবন আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হোক। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে আবারও প্রকল্পটি ঝুলে যাক, তা আমরা চাই না। সেই সঙ্গে ভবনগুলো হস্তান্তর করার পর যাতে পড়ে না থাকে অর্থাৎ দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করা যায়, সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব দিতে হবে।