সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মৌলভীবাজারে পলিথিন হাট

ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হোক

পলিথিনের দৌরাত্ম্যে মৌলভীবাজারে টেকাই দায়। রাস্তায় পলিথিন, নালা-নর্দমায় পলিথিন, এমনকি ঝোড়ো বাতাসে নাক-মুখও ঢেকে যাচ্ছে পলিথিনে। আর পলিথিনে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, এ আলোচনা তো পুরোনো। তবে নতুন খবর হলো, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান পলিথিনের হাট চালু করেছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, প্রতি রোববার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে মেয়র চত্বরের হাটে লোকজন কুড়িয়ে পাওয়া পলিথিন নিয়ে জড়ো হচ্ছেন। প্রতি কেজি পলিথিনের বিপরীতে পাচ্ছেন ৫০ টাকা। এই পলিথিন আপাতত পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনে জমা রাখা হবে।

পরে পরিত্যক্ত পলিথিন রিসাইক্লিং করে, এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হবে। সেটা সম্ভব না হলে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ধ্বংস, নয়তো রিসাইক্লিং করার উদ্যোগ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশে ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কিছু উদ্যোগও দৃশ্যমান ছিল। তারপর যে–কে–সেই। এর মধ্যে সরকার ১৯টি পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে।

আর বছর তিনেক আগে আদালত উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার বন্ধে এক বছর সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। শুধু দেশের আইনেই যে এসব বাধ্যবাধকতা আছে, তা নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে পলিথিনের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার আন্তর্জাতিক একটা তাগিদও আছে।

তবে ওসব আইনকানুন, বিধিনিষেধের থোড়াই কেয়ার করি আমরা। প্রশাসনের চোখের সামনে পলিথিনের কারখানাগুলো চলছে এবং নাগরিকদের পলিথিনের বিকল্প দেওয়ার তেমন জোরদার উদ্যোগ নেই। অথচ আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা পাট দিয়ে পলিথিনের বিকল্প আবিষ্কার করেছেন। শুধু বিশেষ বিশেষ দিবসে প্রশাসন পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা বলে নাকে কাঁদে। ন-মাসে, ছ-মাসে সংবাদমাধ্যমকে খবর দিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে কারখানা বন্ধ করতে যায়।

এর প্রভাব বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। তাই গত বছরও পুরান ঢাকায় পলিথিন তৈরির কারখানায় ছয়জন শ্রমিক জ্যান্ত পুড়ে মারা গেছেন। তাঁদের প্রাণ গেলেও পুরান ঢাকার পলিথিন তৈরির কারখানা বন্ধ হয়নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে যে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন বন্ধ করা যাচ্ছে না, তা বলা বাহুল্য।

কেউ যেখানে পলিথিনের দৌরাত্ম্য নিয়ে গা করছেন না, তখন মৌলভীবাজারের পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আশা করি, তাদের এই উদ্যোগ অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়বে। মন্দ কাজের কত অনুকরণই তো দেখি রোজ। এবার না হয় ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হোক।