সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

প্রাণীগুলোর প্রতি অবহেলা কাম্য নয়

বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে—এই প্রবাদবাক্য কে না জানে। বনের পশুপাখিকেই আবার চিড়িয়াখানায় বন্দী করে রেখে বিনোদন খোঁজে মানুষ। পর্যটনকেন্দ্রেও সেগুলোর ব্যবহার করা হয় পর্যটকদের আনন্দের জন্য। মানুষ যেখানে নিজের মুক্তি বা স্বাধীনতার জন্য নিত্য লড়াই করে যায়, সেখানে পশুপাখির স্বাধীনতা সে নিজেই হরণ করে নেয়। স্বাধীন থাকলেও তাদের সঙ্গে করা হয় নিষ্ঠুর আচরণ। যেমন কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় যে ঘোড়াগুলো পর্যটকদের বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর প্রতি অযত্ন ও অবহেলা কোনোভাবে মানা যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সি–গাল ও লাবণী পয়েন্টে পর্যটকদের ঘোরানোর জন্য ঘোড়া আছে ৩৫টি। অধিকাংশ ঘোড়া অভুক্ত থেকে ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। গত শনিবার বিকেলে সি–গাল সড়কের নর্দমায় পড়ে তিন বছর বয়সী একটি মাদি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে। ঘোড়াটির ছয় মাস বয়সী একটি বাচ্চাও আছে। এর আগেও ঘোড়ার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

পর্যটনের জন্য ব্যবহার হওয়া ঘোড়াগুলোর মালিকদের একটি সংগঠন আছে। সেই সমিতির নেতাদের মতে, পর্যটকদের চড়ানোর জন্য সৈকতে এখন ঘোড়া আছে ৫০টি। যদিও সব কটি ঘোড়া নামানো হয় না। প্রতিটি ঘোড়া কিনতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা। এর আগে ঘোড়ার সংখ্যা ছিল আরও বেশি। অভুক্ত থেকে অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েকটি মারা গেছে।

পর্যটন মৌসুমের সময় ঘোড়াগুলোর খাতির–যত্ন বেশি থাকে। মৌসুম শেষ হলে তাদের কদরও কমে যায়। বর্ষা মৌসুম ও বন্যার কারণে এখন কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো অনেকটা পর্যটকশূন্য। ফলে ঘোড়াগুলো দিয়ে আয়ও কমে গেছে। পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আয়াছুর রহমান বলেন, পর্যটন মৌসুমে যখন সমুদ্রসৈকত লাখো পর্যটকে ভরপুর থাকে, তখন প্রতিটি ঘোড়া থেকে মালিকপক্ষ আয় করে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। আয়রোজগার কমে গেলে মালিকেরা ঘোড়াগুলোকে ঠিকমতো খাবার দেন না। অভুক্ত ঘোড়াগুলো মাঠঘাটে ছেড়ে দেন। বিষাক্ত বর্জ্য খেয়ে অবুঝ প্রাণীগুলো বাঁচার চেষ্টা করে। প্রাণীগুলোর সুরক্ষায় সুষ্ঠু নীতিমালাও নেই।

আয় বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে এভাবে প্রাণীর ব্যবহার অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। এর মধ্যে যদি যত্নও না নেওয়া হয়, ঠিকমতো খাবারও দেওয়া না হয়, তখন তো বিষয়টি আরও বেশি অগ্রহণযোগ্য। কেউ একজন টাকা দিয়ে ঘোড়া কিনে মালিক বলে একটি প্রাণীর সঙ্গে যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যবহার করতে পারেন না। আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন ঘোড়ার মালিকদের প্রতি এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেবে এবং ঘোড়ার মালিকদেরও এ ব্যাপারে বোধোদয় হবে।