সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাংলাদেশের চার কোটি মানুষের জীবনমান ইউরোপীয়দের সমান। এর মাধ্যমে তিনি বলতে চেয়েছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও তা কেনার সামর্থ্য দেশবাসীর আছে। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় বলেননি নিম্ন আয়ের চার কোটি কিংবা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের জীবনমান কোন অবস্থায় আছে।
নিম্ন আয়ের এই চার কোটি মানুষ খুঁজতে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না, টিসিবি ট্রাকে করে ঢাকা শহরে যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে, তার সামনের দীর্ঘ সারিতেই তাদের পাওয়া যাবে। প্রায় দেড় বছর পর ট্রাকে করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাজারমূল্যের চেয়ে কমে চার ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। স্বল্প আয়ের মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দিতে এই উদ্যোগ।
১৫ নভেম্বর প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, প্রথম দিন ঢাকার ৩০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করেছে সংস্থাটি। একেকটি ট্রাকে থাকা ৩০০ জনের পণ্য বিক্রিতে সর্বোচ্চ সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ঘুরে এবং আরও সাতজন ডিলারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে জানা গেছে, টিসিবির মালামাল নিয়ে ট্রাকগুলো সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছায়। এরপর পণ্য বিক্রি শেষ হতে ঘণ্টা তিনেক লাগে। কোথাও কোথাও মাত্র দেড় ঘণ্টায় পণ্য বিক্রি শেষ হয়েছে।
টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দুই কেজি করে মসুর ডাল, আলু ও পেঁয়াজ এবং দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা ও মসুর ডাল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে ১০০ টাকায়। খোলাবাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকা ও আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। টিসিবি চারটি পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিলেও অধিকাংশ জায়গায় আলু ও পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে টিসিবির এই উদ্যোগ ভালো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেড় কোটি জন–অধ্যুষিত ঢাকা শহরে ৩০টি স্থানে টিসিবির ট্রাকে বিক্রি হওয়া পণ্য চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য। টিসিবির চেয়ারম্যান আরিফুল হাসান বলেছেন, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ঢাকার ১৩ লাখ পরিবার কার্ডধারী মানুষের পাশাপাশি আরও ২ লাখ মানুষ ভর্তুকি মূল্যের পণ্য পাবেন।
ট্রাকে টিসিবির পণ্যসামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে শুধু ঢাকায়। সে ক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে যেসব অসচ্ছল ও স্বল্প আয়ের মানুষ আছেন, তঁারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এটা ভাবার কারণ নেই যে ঢাকার বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই আর্থিকভাবে সচ্ছল। ফলে ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম সারা দেশেই শুরু করা প্রয়োজন। যেখানে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব নয়, সেখানে বিকল্প পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাজার অস্থিতিশীল করতে অসাধু চক্র বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।তাই ট্রাকেটি সিবির পণ্য বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি অসাধু চক্র বা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লোক দেখানো অভিযান না চালিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।সেক্ষেত্রে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবেন।