সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বেতনহীন ১০৭ জন গ্রাম পুলিশ 

নালিতাবাড়ীতে এমন পরিস্থিতি দুঃখজনক

একটি ইউনিয়ন বা গ্রামের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষায় গ্রাম পুলিশ ও দফাদারদের ভূমিকা কোনো অর্থেই গৌণ নয়। দিনে–রাতে নিয়মিত টহলদান ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নানা কাজে সহায়তা দিয়ে থাকেন তাঁরা। তাঁদের বেতন-ভাতা আসে সরকারিভাবে ও ইউনিয়ন পরিষদের আয় থেকে।

এ ছাড়া আছে থানা হাজিরা বাবদ ভাতাও। সব মিলিয়ে মাসে ৭ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৮ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পান তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সময়ে একটি পরিবার চালাতে কোনোভাবেই এ অর্থ যথেষ্ট নয়। কিন্তু সেটিও অনেক সময় নিয়মিত পান না দফাদার ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরা।

যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানকার ১০৭ জন দফাদার ও গ্রাম পুলিশের সদস্য ১৩ মাস ধরে বেতন-ভাতা ছাড়া দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ বলেই হয়তো এমনটি সম্ভব!

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সরকারি অংশের বেতন পেলেও গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের অংশের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না তাঁরা।

ফলে গত ১৩ মাসে একেকজন দফাদার ও গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতা বকেয়া আছে যথাক্রমে সাড়ে ৪৫ হাজার টাকা ও ৪২ হাজার ২৫০ টাকা। আমরা আরও অবাক হই, ৪ বছর ২ মাস ধরে থানা হাজিরার টাকা থেকেও বঞ্চিত তাঁরা—মোট যা দাঁড়িয়েছে ৭০ লাখের মতো। দফাদার ও গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের দেখভালের কথা থাকলেও তাদের ভূমিকা নিয়ে আমাদের হতাশ হতে হয়।

যোগানিয়া ইউনিয়নের একজন দফাদার বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। বাধ্য অইয়া ঋণ কইরা সংসার চালাইতাছি। বেতন-ভাতা পরিশোধ করলে আমগোর বিরাট উপকার অইতো।’ দফায় দফায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিপর্যস্ত জনজীবনে অসহায় অবস্থায় আছে উপজেলার সব দফাদার ও গ্রাম পুলিশ।

এ বিষয়ে গত ২৪ মে লিখিত আবেদন জানালেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি গ্রাম পুলিশ সদস্যরা। এখন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে বিষয়টি জানান দিতে চান তাঁরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ-সংক্রান্ত নানা সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতার কথা জানালেন। তাই বলে এত মাস ধরে এতগুলো মানুষ বেতন-ভাতাহীন থাকবেন, কোনো মানে হয় না। এখানে উপজেলা প্রশাসনের অবশ্যই ব্যর্থতা আছে।

জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিন। দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নিয়ে দফাদার ও গ্রাম পুলিশের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করুন।