সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ডায়ালাইসিস যন্ত্র কত দিন নষ্ট থাকবে

সরকারি হাসপাতালের প্রধানতম সুবিধাভোগী হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সামর্থ্যবানেরা চিকিৎসাসেবার জন্য চলে যান বেসরকারি হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতাল কেন সব শ্রেণির স্বাস্থ্যসেবার জন্য আস্থাস্থল হতে পারছে না?

এর উত্তর খুঁজতে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনই যথেষ্ট। যেখানে আমরা দেখছি, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় থাকা ১৯টি ডায়ালাইসিস যন্ত্রের মধ্যে ১৭টিই নষ্ট। এই যদি হয় পরিস্থিতি, তাহলে সর্বস্তরের মানুষ কেন সরকারি হাসপাতালে যাবেন চিকিৎসা নিতে?

কিডনি রোগীদের দুর্ভোগ ভয়াবহ। আমৃত্যু এ রোগ বয়ে বেড়াতে হয়। কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যেতে হয় মানুষকে, এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। সরকারি হাসপাতালের ডায়ালাইসিস সেবার প্রতি কিডনি রোগীরা ভরসা করে থাকেন, কারণ এখানে খরচ কম। এ ছাড়া কম আয়ের বা সামর্থ্যহীন রোগীদের আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালাইসিসের খরচ মেটানো অনেক রোগীর পক্ষেই সম্ভব নয়।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ২০১৩ সালে দুটি ডায়ালাইসিস যন্ত্র দিয়ে কিডনি রোগীদের সেবা দেওয়া শুরু হয়। এরপর কয়েক বছরের মধ্যে যন্ত্রের সংখ্যা আরও বাড়ে। ২০১৯ সালে এসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯। মাঝেমধ্যে দু-তিনটি যন্ত্র বিকল থাকলেও অন্যগুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হতো। কিন্তু গত এক বছরে একে একে ১৭টি যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। একসঙ্গে এতগুলো যন্ত্র নষ্ট হয়ে থাকা কোনোভাবেই মানা যায় না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

হাসপাতাল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে কোনো কোনো রোগীকে এক, দুই কিংবা তিনবার পর্যন্ত ডায়ালাইসিস করতে হয়। প্রতি মাসে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা নেন। প্রতিবার ডায়ালাইসিসের জন্য প্রত্যেক রোগীকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে অনুদান দেওয়া হয়। এ কারণে বিনা খরচে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারেন রোগীরা। অন্যথায় বাইরে থেকে ডায়ালাইসিস করাতে রোগীকে অন্তত চার হাজার টাকা খরচ হয়। অনেকে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে সেবা নিতে গিয়ে ভয়াবহ সংকটে পড়েছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বছর দুবার যন্ত্র মেরামতের তাগিদ দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জানায়, দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ডায়ালাইসিসের যন্ত্রাংশ সুইজারল্যান্ড থেকে আনতে দু-তিন মাস লেগে যায়। সাতক্ষীরার বিষয়টি জানার পর দ্রুত পাঁচ-সাতটি যন্ত্র মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে কয়েকটি যন্ত্র চালু হয়ে যাবে।

কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন প্রকাশের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নষ্ট হওয়া কোনো যন্ত্র চালু হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে জানতে চাই, সাতক্ষীরায় ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো আর কত দিন এভাবে নষ্ট হয়ে থাকবে?