নিত্যপণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি নিয়েই মানুষের এখন যত দুশ্চিন্তা। কোন খাবার ভেজাল, কোন ফলে রাসায়নিক দেওয়া, সেই চিন্তা অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে বললেই চলে। ফলে খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যে অভিযান অনেকটাই দৃশ্যমান নয়। এটি নতুন কোনো ঘটনা নয় যে রমজান মাসে অনেক খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভেজাল মেশানো বা রাসায়নিক প্রয়োগের প্রবণতাও বেড়ে যায়। যেমনটি আমরা টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারস চাষের ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি। সেখানে চাষিদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে।
চাষির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠা খুবই দুঃখজনক ও হতাশাজনক। মাটি, প্রাণ ও মানুষের প্রতি চাষিদের চিরায়ত যে নৈতিক অবস্থান, সেটি আর টিকে থাকল কই। তবে এ দেশে যেখানে সবকিছু ভেঙে পড়ছে, সেখানে চাষিরাও আর পিছিয়ে থাকবেন কেন! যার কারণে রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এর বাজার ধরতে মৌসুমের আগেই রাসায়নিক প্রয়োগ করে জলডুগি জাতের আনারস পরিপক্ব করে তুলছেন তাঁরা। অথচ প্রায় তিন মাস পর এই আনারস বাজারে আসার কথা।
দেশের আনারসের বড় একটি চাহিদা মেটান মধুপুরের চাষিরা। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, মধুপুরে ক্যালেন্ডার ও জলডুগি আনারসের আবাদ হয়। এবার উপজেলাটিতে ৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে জলডুগি জাতের আনারস চাষ করা হয়েছে। কিন্তু ছোট আকারের এই আনারস প্রাকৃতিক নিয়মে পরিপক্ব হওয়ার ধৈর্য ধরছেন না চাষিরা। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে সেই আনারস কয়েক মাস আগেই বাজারে নিয়ে আসছেন তাঁরা।
জলডুগি আনারস দ্রুত বাজারে আনতে দুই দফা রাসায়নিক দেওয়া হচ্ছে। গাছে দ্রুত ফুল আনা ও বড় করার প্রক্রিয়ায় একবার রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। দ্বিতীয়বার রাসায়নিক দেওয়া হচ্ছে আনারস পাকানোর জন্য। অনুমোদিত রাসায়নিক প্রতি লিটারে ১ মিলি ব্যবহারের পরামর্শ কৃষকদের দেওয়া হয় কৃষি বিভাগ থেকে। কিন্তু তাঁরা তা মানেন না। এখন চাষিরা এমনভাবে রাসায়নিক প্রয়োগ করেন, তাতে যেন দুই থেকে চার দিনের মধ্যেই সব আনারস পেকে যায় এবং একসঙ্গে পুরো খেতের আনারস বিক্রি করা যায়।
টাঙ্গাইলের চাষিদের কারণে আনারস এখন আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়েছে। আবার তাঁদের বিরুদ্ধে উৎপাদনে রাসায়নিক প্রয়োগের অভিযোগ নতুন নয়। এর অবসান হওয়া উচিত। তবে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা কৃষকদের অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করেন বলে অভিযোগ চাষিদের। কৃষি বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখানে কী করণীয়? চাষিদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা বাড়ানো হোক। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আনারসে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ বন্ধে আইন প্রয়োগ করা হবে, সেটিই আমাদের কাম্য।