অন্তর্বর্তী সরকার আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) সদস্যদের টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনা জারি করেছে, যাতে আসন্ন দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-২ শাখা থেকে প্রচারিত এক অফিস স্মারকে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে পূর্বপ্রস্তুতি রাখা ও অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট পূজা উদ্যাপন কমিটিগুলোকে পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক পাহারার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও পাহারাদার (পালাক্রমে দিনে অন্তত তিনজন এবং রাতে চারজন) নিয়োগ, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পূজা উদ্যাপন উপলক্ষে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য, বিজিবি, আনসার–ভিডিপি, র্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েন নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে এতে।
পূজায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা বিধানে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ছাত্র-জনতাকে অন্তর্ভুক্ত করে মনিটরিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তটিও ভালো। এর মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে নিরাপত্তার কাজে যুক্ত করা যাবে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো সরকারের সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের মধ্যে অনেক সময়ই ফারাক থেকে যায়। বিশেষ করে বাস্তবায়নের দায়িত্ব যঁাদের ওপর ন্যস্ত থাকে, তাঁদের কারও কারও মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আশা প্রকাশ করেছেন যে এবারের দুর্গোৎসব হবে সবচেয়ে ভালো ও নির্বিঘ্ন পরিবেশে। সনাতন ধর্মের মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণেরও প্রত্যাশা তা–ই। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনের নেতা–কর্মীদেরও সক্রিয় সহযোগিতা জরুরি।
৫ আগস্টের পর যখন বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছিল, তখন সক্রিয় রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা তাঁদের সুরক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। ভবিষ্যতে আমাদের এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্যাপনে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন হবে না। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় বাংলাদেশের মানুষ একটি পরিবারের সদস্য হিসেবেই থাকতে চায়।
শারদীয় দুর্গোৎসব হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসব যাতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্যাপিত হয়, সে বিষয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যাতে অপতথ্য ছড়িয়ে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
অতীতে এ রকম অপতথ্য ছড়িয়ে নানা অঘটন ঘটানো হয়েছে। ২০২২ সালে দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও সহিংসতা ঘটানো ঘটেছিল। যাঁরা এই অপরাধ ঘটিয়েছিলেন, আজও তঁাদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এটাই প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসব। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ বিষয়ে অধিকতর সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, সেটা শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রমাণ করতে হবে।