সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

যশোর বিশ্ববিদ্যালয়

চাকরিপ্রার্থীদেরও রেহাই দিচ্ছে না ছাত্রলীগ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। সেখানে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারিতে সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষকেরা ধর্মঘট করেন। আবার ছাত্রলীগের মাস্তানির প্রতিবাদে শিক্ষকেরা ধর্মঘট করেন। সর্বশেষ লিফট অপারেটর পদে চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে অবরুদ্ধ ও লাঞ্ছিত হন।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সম্প্রতি লিফট অপারেটরের ১২টি পদে ৩৮ প্রার্থীকে পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে ডাকা হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তাঁদের ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে প্রার্থীদের মধ্যে ১১ জনকে ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাসে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশ ক্যাম্পাসে পৌঁছালে বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত আটকে রাখা প্রার্থীদের আবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি কুষ্টিয়া থেকে পরীক্ষা দিতে সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের মূল ফটকে পৌঁছালে আমার প্রবেশপত্র নিয়ে কয়েকজন আমাকে ছাত্র হলের ৩০৪ নম্বর কক্ষে আটকে রাখে।’ 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, হলের যে কক্ষগুলোয় প্রার্থীদের আটকে রাখা হয়, সেসব কক্ষে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা থাকেন। ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকা হলে বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ৩৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৬ জন পরীক্ষা দিতে পেরেছেন। বাকি ১২ জন পরীক্ষা দিতে পারেননি।

অপরাধ ঢাকতে ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতা-কর্মীরা নিজেদের সিসিটিভির ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লিফট অপারেটরের চাকরির সঙ্গে সেখানকার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়। এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব।

তারপরও তারা চাকরিপ্রার্থীদের আটকে রাখার ঔদ্ধত্য পেল কোথায়? বহুদিন ধরেই ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করার সিদ্ধান্তে তদন্ত কমিটি গঠন করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় একজন ভুক্তভোগী মামলা করার পরও এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যে একের পর এক অঘটন ঘটে চলেছে, এর দায় কে নেবে? ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃত্ব সেখানকার কমিটি বাতিল করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পরই তাদের বাতিলাদেশ বাতিল করে কমিটি পুনর্বহাল করা হয়। সে ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসে এই অঘটনের দায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও এড়াতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। সেটি তারা কতটা করেছে, সে নিয়েও প্রশ্ন আছে। উপাচার্য নিজেই যখন বলেছেন যেসব কক্ষে চাকরিপ্রার্থীদের আটকে রাখা হয়েছিল, সেসব কক্ষ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা থাকতেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি বলেছেন, তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁর বিরুদ্ধ পক্ষ এই অপকর্ম করে তাঁর ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে সন্ত্রাস–মাস্তানির অপবাদ থেকে মুক্ত থাকতে হলে চাকরিপ্রার্থীদের যাঁরা অপহরণ করে কক্ষে আটকে রেখেছেন, তাঁদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনা হোক। সরকার একদিকে বলবে আইন সবার জন্য সমান, আবার ছাত্রলীগ করলে সাত খুন মাফ—এই স্ববিরোধিতা কেন? ছাত্রলীগের যে গ্রুপই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে।