৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে অনেকটা নাজুক হয়ে পড়েছিল, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। যে পুলিশ সদস্যরা মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের নিষ্ক্রিয়তা ও কর্মস্থলে অনুপস্থিতিই এর বড় কারণ। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছিল, তখনই কারাগার থেকে একের পর এক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনে বেরিয়ে আসার খবর উদ্বেগজনক।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করেছেন। একইভাবে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছেন। অপরাধের পুরোনো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি চাঁদা চেয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকায় গত মাসে জোড়া খুনের ঘটনায় একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম এসেছে।
২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারে একটি দোকান দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলবল নিয়ে মহড়া দিয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। এ নিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে যাঁর নাম পুলিশের খাতায় আছে, তিনি কী করে প্রকাশ্যে মহড়া দেন?
মোহাম্মদপুরে ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল নামের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রায় দুই যুগ পর জামিনে বের হয়ে এসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে ওই জোড়া খুন হয়। পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার ‘দখল’ নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধ থেকে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে।
ডিএমপি কমিশনার নাইম আহমেদ বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে যাঁরা কারাগারের বাইরে অবস্থান করছেন, তাঁদের ওপর সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি রাখা দরকার। এ কাজ ঠিকভাবে করতে না পারলে সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। কমিশনার মহোদয়ের মধ্যেই যখন এই শঙ্কা, তখন ঢাকা শহরের সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?
প্রথম আলোর খবর থেকে আরও জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত ছয়জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন।
সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার যুক্তি হিসেবে আগের সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে মামলার দোহাই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের কেউ আওয়ামী লীগের আমলে গ্রেপ্তার হননি। তৎকালীন বিএনপি সরকার ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করেছিল, তাঁদের অন্যতম সুব্রত বাইন। তাঁর নামে এখনো ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। সেখানে তাঁর বয়স দেখানো হয়েছে ৫৫ বছর। তাঁকে ধরিয়ে দিতে তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
মূলত এসব সন্ত্রাসী ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসা, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, পরিবহন, ফুটপাত, বাজার, ঝুট ব্যবসা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও নির্মাণকাজ থেকে চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। আবার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য কোনো কোনো মহল তাঁদের ব্যবহার করে, এমন নজিরও কম নয়।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের একাংশ সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব এসব অস্ত্র উদ্ধার করে প্রত্যেক সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। সন্ত্রাসী চক্রকে শক্ত হাতে দমনে এখনই কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া হোক।