কুমিল্লায় তরল বর্জ্য

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ কি চলতে থাকবে

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার আগে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক বছর আগে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের মডেলটাই এমন, যেখানে নদীকে বর্জ্য ফেলার জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এভাবেই উন্নয়নের কথা ভাবা হয়।’ এ কথারই প্রতিফলন কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক–সংলগ্ন বারপাড়া ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে গুংগাইজুরি খাল। কুমিল্লা নগরের উনাইশার এলাকায় ইপিজেডের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সীমানাপ্রাচীরের নিচ দিয়ে বের হওয়া দূষিত পানি বিশাল এলাকার পরিবেশ বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। 

কুমিল্লা ইপিজেড কর্তৃপক্ষের দাবি, ইপিজেডের ভেতরে থাকা দুটি নালা দিয়ে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত নগরের মানববর্জ্যসহ বিভিন্ন বিষাক্ত পানি এর জন্য দায়ী। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, নগরের ড্রেনের পানি দিয়ে খালের পানি এভাবে বিষাক্ত হতে পারে না, এসব বিষাক্ত পানি ইপিজেডের। দুই প্রতিষ্ঠানের পাল্টাপাল্টি দোষারোপের খেলা চলছে বছরের পর বছর ধরে। মাঝখান দিয়ে দুর্বিষহ হয়ে আছে স্থানীয় জনগণের জীবন। পরিবেশ অধিদপ্তরের বক্তব্য, কুমিল্লা ইপিজেডের তরল বর্জ্য পরিশোধনাগারটি ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। তাঁরা তা সরাসরি এবং আইপি ক্যামেরার মাধ্যমেও পর্যবেক্ষণ করেন। সুতরাং ইপিজেডের তরল বর্জ্যে পানি বিষাক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। 

প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কি এমন রহস্যময় বিষয়, যা সরেজমিনে দেখে বোঝা যায় না যে আসলে বিষাক্ত পানির উৎস কী? অন্তত ১৫ বছর ধরে স্থানীয় জনগণের এই ভোগান্তি, অর্থনৈতিক থেকে স্বাস্থ্যগত যে ক্ষতি হলো, এর দায়িত্ব নেবে কে? এ সমস্যা দূর করা তো পরের কথা, সমস্যার উৎস চিহ্নিত করা নিয়েও সংশ্লিষ্ট কারও কোনো সদিচ্ছা আজও দেখা যায়নি। একে অপরের ওপর দোষ চাপানো বা কোনো এক পক্ষ নিয়ে সাফাই গাওয়াতেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করছেন তাঁরা। 

খাল এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার পানির পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন, বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড এবং কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড—এই চারটি প্যারামিটারের ভিত্তিতে কোনো গবেষণাও হয়েছে বলে জানা যায় না। অবিলম্বে বের করতে হবে, এই বিষাক্ত পানির উৎস কোথায়। নিশ্চিত করতে হবে, কুমিল্লার ইপিজেডের ইটিপি আদৌ কাজ করছে কি না? 

কুমিল্লা ইপিজেড, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত হবে খালদূষণের কারণ বের করার সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া। তাহলে পারস্পরিক দোষারোপেরও অবসান হবে এবং এলাকাবাসীর দুর্ভোগ নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়াও সহজ হবে। আশা করি কর্তৃপক্ষগুলোর এ ব্যাপারে বোধোদয় হবে।