উচ্চ শব্দে হর্ন

আইনের কঠোর প্রয়োগের বিকল্প নেই

হর্ন না বাজিয়ে যে গাড়ি চালানো যায়, বাংলাদেশের চালকদের মধ্যে সেই ধারণাটাই অনুপস্থিত। বরং সড়কে রীতিমতো উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতায় নামেন তাঁরা। ফলাফল হলো বায়ুদূষণের পর শব্দদূষণেও বিশ্বে শীর্ষস্থান এখন ঢাকার। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে কর্মদক্ষতা কমার পাশাপাশি নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন নাগরিকেরা। অথচ উচ্চ মাত্রায় হর্ন বাজানো বন্ধে সড়ক পরিবহন আইনে সুস্পষ্ট শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম সম্প্রতি ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দদূষণ নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। ওই জরিপের বরাতে প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শব্দের মানযন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা নমুনায় গুলশান-২ এলাকায় ১৩২ ডেসিবেল পর্যন্ত উচ্চ শব্দের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। শব্দের সহনীয় মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল থেকে এটি অনেক বেশি। বাকি ৯টি এলাকায়ও কমবেশি একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে।

এ বছরের মার্চে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির বৈশ্বিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, শব্দদূষণে প্রথম ও চতুর্থ স্থান দখলকারী শহর ঢাকা ও রাজশাহী। শুধু বড় শহর নয়, সারা দেশেই আশঙ্কাজনকভাবে শব্দদূষণের মাত্রা বাড়ছে। এর প্রমাণ মিলছে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ নূরে আলমের ভাষ্যে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ জন রোগী দেখি। যাঁদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক রোগী পাই, যাঁরা কানে কম শুনছেন।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শব্দদূষণের প্রভাব সামগ্রিকভাবে ব্যাপক। শব্দদূষণের কারণে স্বাস্থ্য ব্যয়ের পাশাপাশি কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় দেশের জিডিপিতে প্রভাব পড়ছে। হর্নের ব্যবহারের সঙ্গে সড়ক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নগর-পরিকল্পনার মতো বিষয় সংশ্লিষ্ট। সামগ্রিকভাবে অযথা হর্ন বাজানো বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৮৮ ধারা অনুযায়ী, উচ্চ মাত্রায় হর্ন বাজালে অনধিক তিন মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এর বড় কারণ হলো, এ আইন প্রয়োগের কর্তৃপক্ষ ট্রাফিক পুলিশ নয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

এটা স্পষ্ট, সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিমালা প্রয়োগের ব্যর্থতার কারণে হর্ন বন্ধ করা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, উচ্চ মাত্রায় হর্ন বাজানোর ফলে যে শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে—এ ধারণাটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখনো প্রতিষ্ঠিত নয়। এ সুযোগেই যাঁর যেভাবে ইচ্ছে হর্ন বাজিয়ে অসহনীয় শব্দদূষণ করে চলেছেন। এর ফল চালক, যাত্রী, পথচারী সবাইকেই ভুগতে হচ্ছে। হর্নের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের বিকল্প নেই।