সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ কে নেবে

দেশে কাজ না পেয়ে বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একাংশ বিদেশে যায়। কিন্তু পদে পদে তঁাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার কর্মীরা যেখানে ১৫–২০ হাজার টাকায় বিদেশে যেতে পারেন, সেখানে আমাদের কর্মীদের কয়েক লাখ টাকা খরচ করতে হয়। অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হন।

করোনা মহামারি চলে যাওয়ার পর গত বছর থেকে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ কর্মী বিদেশে গেলেও তাঁদের অনেকে কাজ না পেয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ শতাংশ কর্মী কোনো কাজ পাননি। ২০ শতাংশ কর্মী তাঁদের চুক্তি অনুসারে কাজ পাননি। কম বেতনের জন্য ফিরেছেন ১৪ শতাংশ কর্মী। আটক হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন ১৬ শতাংশ কর্মী। বৈধ ভিসা না থাকায় সাড়ে ১০ শতাংশ এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে ফিরে এসেছেন ১২ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মী।

২০২০ সালের পর বিদেশে গিয়ে ফিরে আসা ২১৮ কর্মীর ওপর অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরুর প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা একজন নারী কর্মী অভিযোগ করেছেন, তাঁর নিয়োগকর্তা তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে নারী কর্মীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই। ওই নারী কর্মী দূতাবাসের সহায়তায় ফিরে এলেও অনেকে ফিরতে পারেন না। মাসের পর মাস নির্যাতন ভোগ করেন।

বিদেশে কর্মসংস্থানের পুরো প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা আছে বলেই বাংলাদেশি কর্মীরা পদে পদে লাঞ্ছিত ও প্রতারিত হন। প্রথম কথা হলো বৈধভাবে বিদেশে গিয়ে কর্মী কেন কাজ পাবেন না? কাজ না থাকলে কীভাবে প্রবাসী কর্মীর কার্ড তাঁরা সংগ্রহ করলেন? প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যতটা চিন্তিত, প্রবাসী কর্মীদের জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ততটাই নির্লিপ্ত।

সরকারি মালিকানাধীন রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভাষ্য অনুযায়ী, ৯৯ শতাংশ কর্মী পাঠায় বেসরকারি খাত এবং তাঁদের জন্য যাচাই করা কঠিন। তাহলে দূতাবাস বা প্রবাসী মন্ত্রণালয় কী করে? যেভাবে দালাল চক্র সারা দেশে দৌরাত্ম্য দেখাচ্ছে, সেখানে কেবল সচেতনতামূলক কর্মসূচি কাজে আসবে না। আইন ভঙ্গকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

যাঁরা বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন, তাঁদের পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এসব কর্মী যে বিদেশ থেকে নিঃস্ব হয়ে ফিরে এসেছেন, তা নয়। তাঁদের পরিবারও সর্বস্বান্ত হয়েছে। জরিপে উঠে এসেছে, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ৪৭ শতাংশ কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। আমাদের প্রশ্ন হলো, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া তাঁরা গেলেন কীভাবে? সংশ্লিষ্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

যাঁরা সহায়–সম্বল হারিয়ে বিদেশে যান, তাঁরা পদে পদে লাঞ্ছিত হবেন, আর ঘাটে ঘাটে প্রতারণার শিকার হবেন, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থা তথা প্রবাসীকল্যাণ, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। একে অপরের ওপর দায় না চাপিয়ে তারা পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশিত।