গাজীপুরে স্বাস্থ্যসেবার একটি নির্ভরতার জায়গা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১৫ তলা উঁচু এই ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি অসংখ্য মানুষের ভরসার জায়গা। অথচ এই হাসপাতালেই লুকিয়ে আছে রোগী ও স্বজনদের নিত্যদিনের দুর্ভোগের গল্প। বিশেষ করে লিফট-সংকটের নির্মম বাস্তবতা শুধু ভোগান্তি নয়, মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠছে।
হাসপাতালটির ছয়টি লিফটের মধ্যে অর্ধেকই বন্ধ। আর যে তিনটি সচল আছে, সেগুলোর অবস্থাও করুণ। রোগী ও তঁাদের স্বজনেরা দীর্ঘ সারি ধরে অপেক্ষা করেন লিফটের সামনে। একটি লিফটের দরজা খুললেই শুরু হয় হুড়োহুড়ি। হুড়োহুড়ির এই যুদ্ধ জয় করতে না পারলে বেছে নিতে হয় ক্লান্ত সিঁড়ির পথ। বিশেষত অসুস্থ, বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধী মানুষের পক্ষে এই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার লড়াই এক প্রকার অসম্ভব।
গত ছয় মাসে লিফট দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। মমতাজ বেগম, যিনি লিফটে আটকে থেকে প্রাণ হারিয়েছেন; কিংবা জাহিদুল ইসলাম, যিনি ভুলভাবে খোলা লিফটের দরজা দিয়ে নিচে পড়ে প্রাণ দিয়েছেন—তাঁদের মর্মান্তিক মৃত্যুর গল্প স্বজনদের মনে গেঁথে আছে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং গণপূর্ত বিভাগ এখনো নিস্পৃহ।
গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্ব লিফটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ। প্রতি মাসে লিফটের সার্ভিসিং এবং প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা কার্যত কাগজে-কলমেই আটকে আছে। অপর দিকে, ছয়টি লিফট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ৩৬ জন দরকার থাকলেও আছে মাত্র ১১ জন। এ অবস্থায় রোগীরা সেবা পাবেন কীভাবে?
এ অবস্থায় প্রথমত, গণপূর্ত বিভাগকে তাদের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে হবে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে স্বচ্ছ ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালের জন্য পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে সাময়িকভাবে হলেও জনবল বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
পাশাপাশি আধুনিক ও টেকসই লিফট স্থাপন সময়ের দাবি। পুরোনো ও জীর্ণ লিফটগুলো বদলে নতুন প্রযুক্তি সংযোজন করলে শুধু নিরাপত্তাই বৃদ্ধি পাবে না, বরং রোগীদের যাতায়াতও সহজ হবে। লিফট ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় তদারকির প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফট-সংকটের এই দুর্ভোগ নিরসন তথা মানুষের জীবনের প্রতি এত উদাসীনতা মেনে নেওয়া যায় না।
অবহেলার এই চক্র ভাঙতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা পুনঃস্থাপন করতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। রোগীদের মুখে হাসি ফোটাতে, হাসপাতালটিকে রোগীর প্রতি সত্যিকার অর্থে সেবামুখী করে তুলতে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা জরুরি।