সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পাহাড়খেকোদের থামাতেই হবে

গত কয়েক দশকে চট্টগ্রাম নগর অনেকটা পাহাড়শূন্য হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নয়ন এবং বেপরোয়া দখলবাজির শিকার হয়েছে চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো। এখন অল্প যা টিকে আছে, সেগুলোকেও রেহাই দিচ্ছে না পাহাড়খেকোরা। আগের সরকারে আমলে আমরা দেখেছি পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই কার্যকর হচ্ছে না। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাহাড় রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। আদালতের নির্দেশনায় বন্ধ থাকলেও আবারও শুরু হয়ে যায় পাহাড় কাটা। এখনো আমরা এমন পরিস্থিতিই দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা বন্ধে প্রথম আলো নিয়মিত সংবাদ প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করে আসছে। পরিবেশকর্মীরা নিয়মিত প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাতে যে অবস্থার পরিবর্তন আসছে, তা ধরে রাখা যাচ্ছে না। আদালতের নির্দেশনার পর কিছুদিন পাহাড় কাটা বন্ধ থাকছে ঠিকই, এরপর সেই নির্দেশনা আর মানছে না পাহাড়খেকোরা। এখন চট্টগ্রাম মহানগরের অন্তত আটটি এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। নগরের বায়েজিদ থানাধীন তিনটি স্থানে ও আকবরশাহ থানা এলাকায় পাহাড় বেশি কাটা হচ্ছে। এসব পাহাড় রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই করে আসছে। বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সেসব এলাকায় গিয়ে পাহাড়খেকোদের হামলার শিকার হয়েছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নগরে পাহাড় চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টাঙানোর কথা থাকলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। প্রশাসন মামলা ও জরিমানা করে পাহাড় কাটা রোধে চেষ্টা করে গেলেও তা কার্যকর নয়। পরিবেশের মামলায় বেশির ভাগই অর্থদণ্ডে নিষ্পত্তি হয়। এটিও পাহাড় কাটা বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পাহাড় কাটার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলরসহ আগের সরকারের দলীয় নেতা-কর্মীরা যুক্ত থাকার বিষয়টি বারবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখনো কি তাঁরা পাহাড় কেটে যাচ্ছেন নাকি তাঁদের পরিবর্তে অন্যরা সেখানে দখলবাজিতে যুক্ত হয়েছেন? তবে পাহাড়সংশ্লিষ্ট স্থানীয় লোকজন যে এর সঙ্গে যুক্ত, সেটি জানা যাচ্ছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এখন নতুন সরকারের পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা। চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা কেন বন্ধ হয় না এবং প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে নীতি, সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কোথায় গলদ, সেটা তাঁর চেয়ে ভালো আর কারও জানা ও বোঝার কথা নয়। আমরা আশা করব, পাহাড় ধ্বংস বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।