সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কারাগার নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা

দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

দেশের কারাগারগুলোয় অনেক বছর ধরে ধারণক্ষমতার বেশি বন্দী রয়েছে। এ অবস্থায় পাঁচ জেলায় নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পরও সেগুলো চালু না হওয়ার ঘটনাটি হতাশাজনক। সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প নেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বন্দীরা জরাজীর্ণ ভবনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

কারা অধিদপ্তরের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, খুলনা, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, জামালপুর ও কুমিল্লা—এই পাঁচ জেলায় নতুন কারাগারের নির্মাণকাজ চলছে। কোনোটির কাজ চলছে ১৩ বছর ধরে, কোনোটি ৯ বছর, কোনোটি ৫ বছর ধরে। কিন্তু একটি প্রকল্পের কাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি অধিদপ্তর। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) আলাদা দুটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, তড়িঘড়ি করে নতুন নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই। অথচ কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার আগে সমীক্ষা করার কাজটি বাধ্যতামূলক। সময় বেড়ে যাওয়ায় অবধারিতভাবে প্রকল্পের খরচও বেড়েছে। পাঁচ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ঠেকেছে ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায়। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, এ ধরনের প্রকল্প এত দীর্ঘ সময় ধরে চলা উচিত নয়। সমীক্ষা ছাড়া নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্প নেওয়ার কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। কেন সমীক্ষা করা হয়নি, তা জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২০১১ সালে খুলনায় দুই হাজার বন্দী ধারণক্ষমতার নতুন একটি কারাগারের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর কারাগারটি চালু হয়নি। পুরোনো কারাগারেই গাদাগাদি করে থাকছেন বন্দী ও কয়েদিরা। প্রকল্পটি নেওয়ার আগে সমীক্ষা করা হয়নি। এ কারণে নির্মাণকাজ শুরুর পর ভুল হয়েছে পদে পদে। তিনবার সময় বাড়িয়েও সব কাজ শেষ করতে পারেনি কারা অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা কয়েকটি ভবন কয়েক বছর ধরে খালি পড়ে আছে। এতে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে ভবনগুলো। চুরি হচ্ছে ভবনের ভেতরে থাকা উপকরণ। ময়মনসিংহ, নরসিংদী, জামালপুর ও কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিত্রও একই রকম।

গত সরকারের আমলে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানা রকম স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এসব স্থাপনা তৈরিতে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মনীতি কোনো কিছু মানা হয়নি। এর ফলে কাজের কাজ তো কিছু হয়নি; বরং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে। কী কারণে, কাদের গাফিলতিতে সমীক্ষা ছাড়াই নতুন কারাগার নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেই তথ্য উদ্‌ঘাটন করা উচিত। রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।