ভঙ্গুর জননিরাপত্তা

আইনশৃঙ্খলার অবনতি কিসের ইঙ্গিত

দেশে যে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিকার কী? এসব খুনের কারণ যা–ই থাকুক না কেন, সরকার সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পেরেছে, তা বলা যাবে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধের পেছনে পেছনে হাঁটছে। কিন্তু তারা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

মাওলানা সাদ কান্ধলভীপন্থী ও মাওলানা জোবায়েরপন্থীদের বিরোধকে কেন্দ্র করে বুধবার টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর সরকার সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা–সমাবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকদের তো এই দুই পক্ষের অনতিক্রম্য দ্বন্দ্বের কথা জানা না থাকার কোনো কারণ নেই। তাহলে কেন তারা আগে সেখানে সমাবেশ বন্ধ করল না? সরকার সে রকম পদক্ষেপ নিলে হয়তো চারজনকে এভাবে জীবন দিতে হতো না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কিন্তু তিনি দুই পক্ষকে এক টেবিলে বসিয়ে সমঝোতা করতে পারবেন, সেই ভরসা কী।

যশোরের শার্শা উপজেলার পাঁচভুলোট সীমান্তে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পিটুনিতে তিন যুবকের মৃত্যু কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখে ফেরার পথে ওই দুই কিশোরকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আরও মর্মান্তিক। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে যশোরের ওই তিন যুবক খুন হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাতে হবে। এভাবে সীমান্তে একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার শিকার হবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাঁরা কোনো অপরাধ করলে সেই দেশের আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হবে কেন? আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে যে দুই কিশোর নিহত হয়েছে, তাদের হত্যার প্রকৃত কারণ অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। 

কয়েক দিনের ব্যবধানে দুর্বৃত্তদের হাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থীর হত্যার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি গুপ্ত হত্যাকাণ্ড কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রনেতারা বিবৃতিতে বলেছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। 

 উল্লিখিত ঘটনার বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা অপরাধ ঘটে চলেছে। ময়মনসিংহে এক নারীকে তিন মাস আটক রেখে ধর্ষণের পর তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে একজন কর্মী খুন হয়েছেন সেখানকার কয়েকজন সহকর্মীর হাতে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের একটি শাখায় কয়েকজন ডাকাত অস্ত্রসহ ঢুকে পড়ে ব্যাংকটির কর্মী ও গ্রাহকদের জিম্মি করেন। যৌথ বাহিনীর অভিযানে তাঁরা গ্রেপ্তার হন। আমরা মনে করি, এসব ঘটনা সামগ্রিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতার চিত্র তুলে ধরে। 

শিক্ষার্থী হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আমরাও তাদের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে উল্লিখিত প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে শঙ্কা থাকলে কোনো অর্জনই টেকসই হয় না।