সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক

ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর দেশজুড়ে নৈরাজ্য তৈরি হয়, অবনতি ঘটে আইনশৃঙ্খলার। প্রতিকার পাওয়ার জন্য মানুষ যে পুলিশের দ্বারস্থ হবে, সে সুযোগও ছিল না। জনরোষের ভয়ে অনেক থানা থেকে পুলিশ পালিয়েছে। এখনো সব থানায় পুলিশের কার্যক্রম শুরু হওয়ার মতো পরিবেশ নেই। তবে শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অনেকগুলো থানায় সেবা কার্যক্রম শুরু হওয়ার খবরটি খুবই স্বস্তির বলে মনে করি। এর মধ্য দিয়ে আশা করা যায় পুরো ঢাকাসহ দেশের সব জায়গায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবারও পুলিশের কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, তিন দিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার সকাল আটটা থেকে ডিএমপির ২৯ থানায় সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাহারায় পুলিশ সদস্যরা তাঁদের কর্মস্থলে যোগ দেন। যেসব থানায় হামলা হয়নি বা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর যেসব থানায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সেসব থানায় পুলিশ সদস্যরা এলেও তাঁদের বসার মতো অবস্থা ছিল না। তাই ডিএমপির ২১ থানায় এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট  বিকেল থেকে রাজধানীসহ দেশের অনেক থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আন্দোলন দমন করতে গিয়ে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের কারণে পুলিশের ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে মানুষ। জন–আক্রোশের শিকার হয়ে পুলিশের অনেক সদস্য নিহত হন। এমনকি থানা ও পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। এর ফলে পুলিশি ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে।

এ সুযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে চোর-ডাকাতের উপদ্রবও বেড়ে যায়। খোদ রাজধানীতেই অনেক এলাকায় চুরি ও ডাকাতির আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় অনেক এলাকার বাসিন্দারা চুরি-ডাকাতি রোধে রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা তঁাদের সহযোগিতা করেছেন। শুধু চোর–ডাকাতের উপদ্রব নয়, দেশের অনেক জায়গায় লুটপাট, ভাঙচুর, দখলবাজি দেখা গেছে।

যেসব থানায় হামলা হয়নি, সেসব থানায় কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করা সম্ভব। আর যেসব থানায় আসবাব ভাঙচুর হয়েছে, সেসব থানায় দ্রুত আসবাব কিনতে হবে। ভবন বা ঘর মেরামতের প্রয়োজন হলে সেটাও দ্রুত মেরামত করতে হবে। থানায় পুলিশ সদস্যদের অনেকে সাদাপোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। হয়তো কিছুটা ভয় থেকে। এই ভয়কে জয় করাই হবে পুলিশ বাহিনীর প্রধান কর্তব্য। সেটা কীভাবে সম্ভব? বলপ্রয়োগ করে কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে যে সম্ভব নয়, সেটা সাম্প্রতিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেই প্রমাণিত। সেবা দিয়েই পুলিশকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। 

পুলিশের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন। এটি ভালো পদক্ষেপ হলেও বেশি দিন চলতে পারে না। ট্রাফিক পুলিশকে দ্রুত কাজে ফেরাতে হবে। সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহূর্তে নিয়মিত বাহিনীতে যাঁরা আছেন, তাঁদের দিয়ে কাজ করাতে হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন পুলিশের সাবেক প্রধান। 

বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বণ্টিত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনা ও তদারকির অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। 

আমরা আশা করব, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বাত্মক প্রয়াস নেবেন। সাধারণ মানুষ যদি বুঝতে পারেন, পুলিশ তঁাদের অন্যায়ভাবে হয়রানি করবে না, তাঁদের কাছে গিয়ে সহায়তা পাওয়া যাবে, তাহলে তাঁদের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠবে।