১১ ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ সাগর নন্দিনী-২-এর আগুন নেভাতে সক্ষম হন। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর চেষ্টার পর মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। এটা স্বস্তির কথা। কিন্তু এর আগে যে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে, তা কোনোভাবে পূরণীয় নয়।
একই জাহাজে দুই দফায় আগুন আগে। গত শনিবার বেলা দুইটার দিকে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সময় জাহাজে নয়জন কর্মী ছিলেন এবং তঁাদের মধ্যে চারজন মারা যান। তেল সরানোর সময় সোমবার দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণ ঘটলে ৯ জন পুলিশসহ ১১ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানায়, সোমবার বিকেল থেকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ থেকে সাগর নন্দিনী-৪ নামের অপর একটি জাহাজে জ্বালানি তেল অপসারণের কাজ চলছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হঠাৎ বিস্ফোরণে দুটি জাহাজে আগুন ধরে যায়।
এটা কি নিছক দুর্ঘটনা? একই জাহাজে দু–দুবার আগুন লাগার ঘটনা কি রোধ করা যেত না? ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঝালকাঠির স্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামে বলেছেন, দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান চলছে। বিস্ফোরণে জাহাজের ভেতরের অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। জাহাজে এখনো প্রায় চার লাখ লিটার তেল মজুত আছে।
পদ্মা অয়েল ও ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ঈদের দুই দিন আগে ১১ লাখ লিটার তেলবাহী সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি ঝালকাঠি সুগন্ধা নদীর তেলের ডিপো-সংলগ্ন এলাকায় নোঙর করে। এটি পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোতে খালাস করার অপেক্ষায় ছিল। ঈদুল আজহার ছুটিতে ডিপো বন্ধ থাকায় তেল খালাস করা সম্ভব হয়নি।
জ্বালানি তেল সরবরাহ জরুরি সেবার মধ্যেই পড়ে। ঈদ বা অন্যান্য সরকারি ছুটিতে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হলো না কেন? ঈদের ছুটিতে ডিপোতে যদি তেল খালাস করা না যায়, তেলবাহী জাহাজ পাঠানো হলো কেন? যখন পাঠানো হয়েছে, তখন দ্রুত তেল খালাসেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে। দুর্ঘটনার বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অদক্ষতা ও গাফিলতির কারণেই তেলের জাহাজে আগুন লেগেছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তেল ধারণকারী ট্যাংকারে আগুন না লাগায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। জাহাজে আগুন লেগে চারজন মানুষ মারা গেছেন, ১১ জন আহত হয়েছেন, প্রচুর তেল নদীতে ভেসে গেছে—এসব কি বড় ধরনের ক্ষতি নয়?
তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ৩ জুন রূপগঞ্জের দড়িকান্দি এলাকায় একটি জেটিতে নোঙর করা অবস্থায় ‘ও টি সাংহাই-৮’–এর ট্যাংকারে বিস্ফোরণ ঘটলে আট শ্রমিক দগ্ধ হন। মে মাসে বরিশাল নগরীসংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে একটি তেলের ট্যাংকারে আগুন লেগে দুজন মারা যান।
ঝালকাঠির সুগন্ধায় একই তেলের জাহাজে দু-দুবার আগুন লাগার পেছনে কার কার গাফিলতি বা পেশাগত অদক্ষতা ছিল, সেটা খতিয়ে দেখা হোক। জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অনেক সময় লোকদেখানো কমিটি করা হয় সত্য প্রকাশ নয়, আড়াল করার জন্য। সাগর নন্দিনী-২–এর ঘটনায়ও এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। প্রাণঘাতী ও বিপজ্জনক এই দুর্ঘটনা রোধ করতেই হবে।