সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

হামলা ও উল্টো মামলা

আক্রান্তরা জেলে, আক্রমণকারীরা বাইরে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যে ছাত্রসংগঠনটি প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকে আক্রান্ত হয়েছিল, সেই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এখন কারাগারে। আর যে ছাত্রসংগঠন তাঁদের ওপর হামলা চালাল, তাদের নেতা-কর্মীরা মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্র অধিকার পরিষদ আহূত সমাবেশে ছাত্রলীগ হামলা করে তাদের ১২ জন নেতা-কর্মীকে আহত করে। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও প্রায় সব গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। এরপর ছাত্র অধিকার পরিষদের আহত নেতা-কর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানেও আরেক দফা হামলা হয়।

সরকার মুখে বলে আইন সবার জন্য সমান। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ছাত্রলীগ যখন অন্য ছাত্রসংগঠনের সভা–সমাবেশে হামলা করে, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নীরব থাকে। ৭ অক্টোবরের ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতা ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৫ জন নেতা-কর্মীর নামে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং একজনকে পলাতক দেখায়। এরপর আদালত ২৪ জনকে কারাগারে পাঠান এবং ১১ অক্টোবর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন।

যাঁরা ছাত্র অধিকার পরিষদের সমাবেশে হামলা চালালেন, তঁাদের কারও বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো আক্রান্ত সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো। এরই নাম কি আইনের শাসন? যদি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেদিনের ঘটনায় আহতও হয়ে থাকেন, সে জন্য দায়ী কে? ছাত্র অধিকার পরিষদের সমাবেশে তঁারা কেন হামলা করতে গেলেন? তাঁদের হামলার পরই দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনটি কি ধরে নিয়েছে যে ক্যাম্পাসে তারা যা খুশি করতে পারবে, প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের সমাবেশে হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের শায়েস্তা করবে, অথচ তাদের কেউ কিছু বলবে না?

কোনো সভ্য দেশে কি এটি চলতে পারে? তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কী প্রয়োজন। ছাত্রলীগই ঠিক করুক, কারা সমাবেশ করতে পারবে আর কারা পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনটি একের পর এক অঘটন ঘটাচ্ছে, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বিকার। তাদের এ অবস্থান সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে, তেমনি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশও নষ্ট করছে।

‘সমাবেশের অনুমতি নেওয়া হয়নি’—এ অজুহাত খাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না। এর আগে ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা উপাচার্যের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেও ছাত্রলীগের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন।

ছাত্র অধিকার পরিষদের যেসব নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। যাঁরা সেদিন ছাত্র অধিকার পরিষদের সমাবেশে হামলা করেছেন, তঁাদের আইনের আওতায় আনা হোক। ওই দিনের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।

কিন্তু কাজটি কে করবে? অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করেনি—এ ঠুনকো যুক্তি দিয়ে যাঁরা আক্রমণকারীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন, তঁাদের কাছে সেটি আশা করা যায় না।